উন্নয়নে অবদান রাখতে সশস্ত্র বাহিনীকে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৫১
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করে ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির উন্নয়নে এবং গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক স্থিতিশীলতায় আরও অবদান রাখতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বের বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা ও পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর সফলতায় সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যেন আমরা উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে পারি।’
বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকায় মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ডিএসসিএসসি ২০১৮-২০১৯ কোর্সের’ গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. এনায়েত উল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিদেশি কূটনীতিক এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্বের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তাদের অবদান প্রশংসনীয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন নতুন পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এ বিদ্যাপীঠ থেকে ‘পিএসসি’ ডিগ্রি অর্জন, যেকোনো সামরিক অফিসারের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। আজ যারা সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করে গ্র্যাজুয়েট হলো, তাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিবাদন।
তিনি বলেন, ‘আমি একইসঙ্গে আপনাদের জীবনসঙ্গিনীদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনাদের এ সাফল্যের পেছনে তাদেরও অনেক অবদান রয়েছে। সবসময় পাশে থেকে তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আমি আপনাদের সবার পেশাগত, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সাফল্য কামনা করছি।’
মহান ভাষা আন্দোলনের এই মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা শহীদ ও জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও নির্যাতিত নারীদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের যারা দেশের শান্তি রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তি মিশনে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে এ কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ স্টাফ কলেজ এখন দেশের সীমা পেরিয়ে বর্হিবিশ্বে এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এ স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর ৪৩টি, নৌবাহিনীর ৩৭টি এবং বিমানবাহিনীর ৩৯টি স্টাফ কোর্স সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ১ হাজার ১১১ জন অফিসার এখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। তারা সবাই নিজ নিজ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তোমরা সমর বিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছ। এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তোমাদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে। ভবিষ্যতে বৃহৎ নেতৃত্ব প্রদানে তোমরা নিজেদের প্রস্তুত রাখবে। সততার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবে।’
তিনি বলেন, এ বছর মোট ১১ জন নারী অফিসার গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী অফিসারের কোর্সে অংশগ্রহণ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আশা করি, নারী অফিসারদের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ জানিয়ে বলেন, নিজ নিজ দেশে ফিরে আপনারা আমাদের শুভেচ্ছা এবং দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও অতিথিপরায়ণ জনগণের কথা আপনাদের দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন।
সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্টাফ কলেজের বহুতল একাডেমিক ভবনসহ বেশকিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে গতিশীল করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিকল্পনাও করা হয়েছে। এগুলো ভবিষ্যতে কলেজের প্রশিক্ষণ কলেবরের আরও আধুনিকায়ন করবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের ১০ বছরের অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল মানুষ উপভোগ করছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। দারিদ্র্যের হার কমে এখন ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭২ বছরেরও বেশি। জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আবারও বিপুল ভোটে আমাদের নির্বাচিত করেছে। আমরা জনগণকে দেওয়া প্রতিটি ওয়াদার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করব।’ বাসস।
ফাইল ছবি
সারাবাংলা/টিআর