একুশে গ্রন্থমেলা: আছে স্বস্তি, আছে অভিযোগ
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৯
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: এবারের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’র প্রথম সপ্তাহান্তের ঠিক আগের দিন মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একদিকে যেমন লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের স্বস্তি এবং ভালোলাগা আছে, তেমনই জমেছে খেদ। কেননা, এবারের এই প্রাণের মেলার প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার দিন বৃহস্পতিবারও মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে মেলায় ইট নিয়ে প্রবেশ করেছে ইট বোঝাই ভ্যান।
সেসব ইট বিছানো হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্টলের আশে-পাশের খোলা স্থানে। এ নিয়ে মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধররা-যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তেমনই তুলছেন-মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, জানাচ্ছেন অনুযোগও। এদিকে, এবারের মেলার সার্বিক দিক নিয়ে লেখক-পাঠকরাও প্রকাশ করেছেন ইতিবাচক এবং নেতিবাচক নানান প্রতিক্রিয়া।
এ বিষয়ে মেলার মূল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থার বিভিন্ন প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বললে তারা-মেলার ইতিবাচক দিকের চেয়ে প্রাধান্য দিলেন নেতিবাচক দিকগুলোর উপরে। তারা বলছেন, বিগত যেকোন গ্রন্থমেলার চেয়ে এবারের মেলার স্টল বিন্যাস, নিঃসন্দেহে অনেক ভালো হয়েছে। যার কারণে মেলার সার্বিক পরিবেশ পরিপূর্ণভাবে গুছিয়ে উঠলে মেলায় আগত লেখক-পাঠক, বইপ্রেমীসহ দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে স্টলে-প্যাভিলিয়নে ঘুরে ঘুরে বই দেখতে পারবে-কিনতে পারবে। কিন্তু মেলার ৬ষ্ঠ দিনে এসেও মেলার প্যাভিলিয়ন ও স্টলে আসা-যাওয়ার রাস্তায় ইট বিছানো, বালি দেওয়ার কাজ চলছে। এটা কেমন কথা। এগুলোতে মেলা শুরুর আগেই হওয়ার কথা। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল প্রবেশ পথ খুলে না দেওয়া, ধূলোর কবল থেকে মেলাকে এখনও মুক্ত করতে না পারা তো রয়েছেই।
এ বিষয়ে প্রকাশনা সংস্থা আবিষ্কার-এর স্বত্বাধিকারী দেলোওয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের মেলার সার্বিক পরিবেশ অনেক নান্দনিক। বিশেষ করে মেলার স্টল বিন্যাস এবং এক স্টল বা প্যাভিলিয়ন থেকে অন্য স্টল বা প্যাভিলিয়নের চার পাশে যথেষ্ট খোলা জায়গা রাখা হয়েছে; এটা খুব ভালো। কিন্তু মেলার ৬ষ্ঠ দিনে এসেও মেলার অন্যান্য দিকটি সেভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এখনও কিছু জায়গায় ইট বিছানোর কাজ চলছে! আর ধূলো-বালির প্রকোপ তো আছেই।
মেলার এতদিন পর্যন্ত এসব সমস্যা কেন থাকবে তা নিয়ে নিজের ক্ষুব্ধ অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
মেলার সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে স্টল বিন্যাস ভালো হয়েছে উল্লেখ করে প্রকাশনা সংস্থা উৎস’র স্বত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম বলেন, ‘আমাদের কৃষিসভ্যতার শুরুর দিকে ১৮ মাসে বছর ছিল। আমার মনে হয়-বাংলা একাডেমি ২৮ দিনের বইমেলাকে সেই ১৮ মাসের বছর হিসেবে মনে করেন। তা না হলে কি আর প্রতিবছর মেলার শুরুর আগেই যে কাজ শেষ করার কথা সেই কাজ মেলার অর্ধেক পর্যন্ত চলতে থাকে! থাকে না।’
মেলায় বিভিন্ন স্থানে নতুনভাবে ইট বিছানো দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমি যদি ফেব্রুয়ারির ২৮ দিনকে ১৮ মাসে বছর না-ই মনে করবে, তাহলে-কেন, প্রতিবছরের মতো এবারও পরিচ্ছন্ন স্টল বিন্যাসের মেলায়ও কাজ শুরু করে মেলার সপ্তম দিন পর্যন্ত মেলা গোছানোর কাজ করতে হবে!’
কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘সত্যিকারের একটা বড় মেলা হচ্ছে এবার। নানা আয়োজনে মুখরিত। বইয়ের সঙ্গে নানা আয়োজন মেলাকে আরও বেশি সুন্দর করে তুলেছে। বিশেষ করে এবারের মেলার সঙ্গে স্বাধীনতা স্তম্ভের জলাধারকে যুক্ত করা-খুবই ভালো হয়েছে। স্টল বিন্যাসের দিকটিও চমৎকার হয়েছে। কিন্তু শুধু ধূলো-বালি থেকে মুক্ত করতে পারেনি। এটা পারলেই মেলাটা পরিপূর্ণতা পাবে।’
এদিকে এবারের গ্রন্থমেলার ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও মেলার পরিবেশ নিয়ে বাংলা একাডেমি কর্ণাপত করছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক।
এ নিয়ে প্রকাশনা সংস্থা শ্রাবণ-এর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান বলেন, ‘বাংলা একাডেমির খামখেয়ালিপনার কারণে প্রতিবছরই মেলার পরিবেশ নিয়ে নানান কথা ওঠে। এবারও একাডেমি কর্তৃপক্ষ অভিযোগের তীর থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘মেলা শুরুর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন উদ্যানের মেইন গেটটি খুলে দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত একাডেমি কর্তৃপক্ষ তা করেনি। মেইন গেটটি যদি খোলা থাকত তাহলে পূর্বদিক থেকে আগতরা ওই গেইটটি দিয়েই প্রবেশ করত। ওই গেইটটি খোলা না থাকার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যানজটের কারণে অনেকেই মেলায় আসেন না। মেলায় সমাগম বাড়লেই বেড়ে যায় ধূলো-বালির উপদ্রব।
এ বিষয়ে রবিন আহসান বলেন, ‘ধূলোর অত্যাচারে অনেকেই মেলায় আসতে চান না।’
এ সময় তিনি স্টল বিন্যাস নিয়ে প্রশংসা করার পাশাপাশি মেলার সময় বৃদ্ধিরও দাবি জানান।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘অনেক স্থানে ঘাসের পরিমাণ এতটাই বেশি যে সেখানে ইট বসানোর দরকার ছিলো না। প্রকাশকদের দাবির মুখে আবার ইট বিছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি এটি শেষ হবে।’
আর গেটের বিষয়টি শুধু প্রকাশকদের নয় আমাদেরও দাবি ছিলো। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে পুলিশ এটি না করার জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করেছে। এ কারণে এটি করতে পারিনি।
অপরদিকে, মেলার প্রথম সপ্তাহের শেষ দিনের বিকেলে এবারের গ্রন্থমেলার সার্বিক পরিস্থিতি এবং পরিকল্পনা নিয়ে একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন। এতে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। তিনি বলেন, মেলায় যে এখনও স্টলের সামনে এবং মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে ইট বিছানোর কাজ চলছে, এ জন্যে আমরা সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যেই এসব এসব কাজ শেষ হবে। ধুলো-বালিও কমে যাবে।
সারাবাংলা/এসএ/একে