খালেদা জিয়ার কারাবাসের একবছর
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৯
।। আব্দুল জাব্বার খান ও আরিফুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। ২০১৮ সালের এই দিনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় নিম্ন আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ভবনে বন্দি। কারাবাসের একবছর পূর্ণ হলেও জামিনে মুক্তি নিয়ে আশাহত বিএনপির আইনজীবীরা।
খালেদা জিয়ার প্যানেলভুক্ত একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইনি মোকাবেলায় খালেদা জিয়ার জামিন সুদুর পরাহত। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সহসাই মুক্তি সম্ভব নয় বলেই মনে করেন আইনজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরীক অবস্থা ভালো না। তিনি একেবারেই হাটতে পারেন না। দুই হাতেই ব্যথা। শরীরের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ। তিনি আরও বলেন, সরকার যে ফরমুলা করেছে এখান থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব না। যতদিন সম্ভব না হবে, ততোদিন দেশে সভ্যতা ফিরে আসবে না।’ এছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন বেগবান করতে হবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘কেবল সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হতে পারছেন না। তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার প্যানেলভুক্ত আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল সারাবাংলাকে বলেন, ‘চেয়ারপারনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা, এগুলো রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনের বিষয়টি দীর্ঘ সূত্রিতা হবে। এক মামলায় জামিন আবেদন করলে আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখায়। তাছাড়া জামিনের আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ছয় থেকে সাত বার করে সময় নেয়। এতো দীর্ঘ সূত্রিতা ছাড়া কিছুই না। এভাবে আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি সুদুর পরাহত।’ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প কোনো পথ নেই বলেই তিনি মনে করেন।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামিনে মুক্ত হতে হলে খালেদা জিয়াকে আইনি মোকাবেলা করেই আসতে হবে। আইনি মোকাবেলা না করে মুক্তি সম্ভব নয়।’
রাজনৈতি মামলা দিয়ে বেগম জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে বিএনপি আইনজীবীদের এমন দাবির প্রতিউত্তরে দুদকের এ আইনজীবী বলেন, ‘দুদকের মামলার সঙ্গে রাজনৈতিক কোন সম্পৃক্ততা নাই। দুদকের মামলা সম্পূর্ণ তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই এগিয়েছে। এটার সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নাই।’
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। কারাগারে থাকা অবস্থায় এই মামলায় উচ্চ আদালত তার সাজা আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করে রায় দেন। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েব সাইটে ১৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
এ মামলায় খালেদা জিয়া মূল আসামি যে কারণে তার সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে পূর্ণঙ্গ রায়ে বলা হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যা উচ্চ আদালতেও বহাল থাকে। এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আরেকটি মামলায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয় আদালত। ফলে দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন হলেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় জামিনে মুক্তি সম্ভবপর হয়নি।
এ দুই মামলা ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে আরও ৩৫ মামলা রয়েছে।
সারাবাংলা/এজেডকে/এআই/এমআই
খালেদা খালেদা জিয়া খালেদা জিয়ার কারাভোগের এক বছর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা