স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে
১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:৫০
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে এমন অভিমত দিয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে (এফডিআই) ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা, বিদেশি বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়, রফতানি বৈচিত্রকরণ, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের পরিসর বাড়ানো ও পণ্যের উচ্চতর গুণমান নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী বিডিএফ-২০১৮ সম্মেলনের ‘ক্রিয়েটিং এন এ্যানাবলিং এনভায়রনমেন্ট ফর এফডিআই অ্যান্ড প্রাইভেট সেক্টর গ্রোথ’ শীর্ষক অধিবেশনে দেশি-বিদেশি নীতি নির্ধারকরদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এফডিআই বাড়াতে ইতোমধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে আমাদের সক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এ সক্ষমতা আরও বাড়বে। ২০২১ সালের মধ্যে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কের ঘরে (বর্তমান অবস্থান ১৭৬) নিয়ে আসার টার্গেট সরকার নিয়েছে। পাশাপাশি একই সময়ে দেশের প্রবৃদ্ধিও ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশের ধারবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে জাপানভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী জাইকার ডিরেক্টর জেনারেল কেইচিরো নাকাজাওয়া বলেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে আগামী তিন বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশের ঘরে থাকবে, যা চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের চেয়েও বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল বিজনেস কমপিটেটিভনেস সূচকেও বাংলাদেশর অবস্থান ভালো। তাই বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য।
তবে ধারাবাহিক উচ্চপ্রবৃদ্ধির তুলনায় বাংলাদেশ কম এফডিআই পাচ্ছে বলে মনে করেন কেইচিরো নাকাজাওয়া। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির উচ্চগতি ধরে রাখতে বাংলাদেশকে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে ইপিজেডগুলো ভালো দৃষ্টান্ত। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে তিনি রফতানি বৈচিত্রকরণ ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন।
আইএফসির সিনিয়র ইকোনমিস্ট এন্ড প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, প্রতিবছর দেশের শ্রমবাজারে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী প্রবেশ করছে। তাদের জন্য কোয়ালিটি জব তৈরি করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবে বেসরকারি খাতে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। এজন্য সরকারকে এফডিআইয়ের সাথে স্থানীয় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে সম্পৃক্ত করা নীতি কৌশল অবলম্বন করতে হবে। স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের মতে উন্নত বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে বেসরকারি খাত। এজন্য প্রযুক্তিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহ রাখতে কর্মসংস্থান, স্থানীয় চাহিদা পূরণ এবং রফতানি- এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এতে আরও বক্তব্য রাখবেন অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির।
বিডিএফ একটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্ট, যেখানে সরকার তার উন্নয়ন অংশীদারদের নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য আরও অংশীদারিত্ব আবিস্কার করতে কাজ করে।
তৃতীয়বারের মতো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) আয়োজিত এ সম্মেলনে জাপান, নেদারল্যান্ডসসহ ৩৬টি দাতা সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এই সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোকেই প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার।
]
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে