Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি ঝুঁকিপূর্ণ : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়


১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:৫৬

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট 

ঢাকা : বাস্তুচ্যুত রোহিঙাদের ফেরানোর জন্য মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের চুক্তিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিজেদের সমস্যা সমাধানে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে ঢাকা।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআরকে পাশ কাটিয়ে এ চুক্তি করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে করা চুক্তিতে দুর্বল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয়তে এবং সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যম সৌদি গেজেটের সম্পাদকীয়তেও একই কথা বলা হয়েছে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেন, ‘এটি কোনো চুক্তিই না। আমরা বিশ্বাস করি, (রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন) অপারেশন যাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে চলে তা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত রাখতে হবে। এ চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করা হলেও চুক্তিতে অংশীদার করা হয়নি।’

অ্যান্তনিও আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং তাদেরকে অবশ্যই তাদের আদি বাড়িতে ফিরে যেতে দিতে হবে। তাদেরকে কোনো আশ্রয় শিবিরে রাখা যাবে না। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তা না হলে এটি হবে সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়।’

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই প্রত্যাবর্তন এক ধরনের তাড়াহুড়া (প্রিম্যাচিউর)। এছাড়া জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তন করানো হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’

সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক পরিচালক জেমস গোমেজ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মনে ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের স্মৃতি এখনও পুরনো হয়নি। তাদেরকে এখনই ফেরত পাঠানোর সময় আসেনি। স্বেচ্ছায় যেতে চাইলেই শুধু কাউকে পাঠানো হবে, এমন কথাও এতে বলা হয়নি। সেইসাথে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনোরূপ পরামর্শ ছাড়াই সময়সীমার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যে কোনো জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তন হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’

সৌদি আরবের সরকারি পত্রিকা সউদি গেজেটের এক সম্পাদকীয়তে এ চুক্তিকে ভয়াবহ বিপদজনক চুক্তি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি আদৌও কোনো চুক্তি নয়। এই চুক্তি বাতিল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই চাপ দেয়া উচিত। এ চুক্তিতে বিপদজনক ফাঁক (হোল) রয়ে গেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো চুক্তির কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। উপরন্ত তাদেরকে ‘রেসিডেন্টস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদেরকে মিয়ানমারের ‘সিটিজেনস’ বা নাগরিক বলা হয়নি। অথচ তারা মিয়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছেন। খুবই বিস্ময়কর বিষয় হলো, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক।

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘এ চুুক্তি একটি খাড়াপ চুক্তি। তাদের মতে অতি তাড়াতাড়ির কারণে যে কোন কিছুই খারাপ ফল বয়ে আনে।’

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুুন কবির বলেন, ‘আমরা আমাদের দিক থেকে এ চুক্তিকে গুরুত্বপুর্ণ মনে করছি। কারণ ১টি কাঠামোর মধ্য দিয়ে দ্রুত বাংলাদেশ একটি প্রত্যাবাসন শুরু করতে চেষ্টা করছে। তবে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকেও তারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তাও যুক্তিযুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তো চাচ্ছি আমাদের গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এটা আমাদের প্রাইয়োরিটি। তবে যারা যাবে তাদের বিষয়ে যুক্তি থাকছে যে, নিরাপত্তা ও অধিকারের বিষয়গুলো সুনিশ্চিত করা। তবে আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সমাজের মিয়ানমারের উপরও অব্যাহত চাপ রাখা জরুরী। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সমাজ যে প্রতিক্রিয়া, তা তারা ঠিকই করছে।’

হুমায়ুুন কবির বলেন, ‘এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমরা সাক্ষাৎ সমস্যায় ভুগছি। এ লোকজন যদি ফেরত যাবার পর তা টেকসই না হয় তবে আবার ফেরত আসবে। তাই আন্তর্জাতিক সমাজের উচিৎ রোহিঙাদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপে রাখা। আর আমরা আন্তর্জাতিক সমাজের সাথে ঐক্যবদ্ধ আছি এখন এ বিষয়ে মিয়ানমারকে সক্রিয় হতে হবে।’

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর