রামপুরা-কুড়িল সড়কে ম্যানহোলের গর্তে যানবাহনের দুর্ভোগ
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:০৯
।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন রাজধানীর রামপুরা-কুড়িল বিশ্বরোধ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য ম্যানহোলের গর্ত। কয়েকমাস আগে এ সড়কের ম্যানহোলগুলো সংস্কার করার সময় সৃষ্টি হয় এসব গর্ত। তবে সংস্কার কাজ শেষ হলেও ম্যানহোলের চারপাশ সঠিকভাবে মেরামত না করায় এসব গর্ত ক্রমেই বড় হচ্ছে। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে নাকাল হচ্ছেন।
এছাড়াও সড়কের কোথাও কোথাও সংস্কার করার সময় সঠিকভাবে মেরামত না করায় সেসব স্থানে মাটি দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। এসব গর্তের কারণে যানবাহনগুলো সঠিকভাবে চলাচল করতে না পেরে সৃষ্টি হয় যানজট। কখনও কখনও এসব গর্তে পড়ার ভয়ে যানবাহনকে এদিক ওদিক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন চালকরা। আবার সর্বনিম্ম ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চালালেও ওইসব গর্তে পড়ে যানবাহন ক্ষতির শিকার হন। তাই সড়কের বিদ্যমান এসব গর্তের স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন যানবাহন চালকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও যানবাহন চালকরা জানান, গত সাত-আট মাস আগে রামপুরা থেকে কুড়িল পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে ম্যানহোল সংস্কার করা হয়। এ সময় ম্যানহোল প্রতিস্থাপনের জন্য সড়ক কেটে ফেলা হয়। কিন্তু কেটে ফেলা সড়কে ম্যানহোল স্থাপনের পর সেসব স্থানে অমাঞ্জস্যভাবে সড়ক মেরামত করা হয়েছে। যে কারণে এসব অসামঞ্জস্য উঁচুনিচু গর্ত এখন সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় নানান গর্তে। আর এটি ক্রমেই যানবাহনের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে বলে জানান সড়ক ব্যবহারকারীরা।
মালিবাগের বাসিন্দা রফিকুল বারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার অফিস বসুন্ধরায়। প্রতিদিন দুইবার মোটরসাইকেলে করে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু সড়কে ম্যানহোলের আশপাশে ছোট বড় গর্ত নানান সমস্যার সৃষ্টি করে।’
তিনি বলেন, ‘আমার চোখের সামনে এমন বহু দুর্ঘটনা দেখেছি যে, হয়ত একটা মোটর সাইকেল কিংবা গাড়ি গর্তে পড়লে আর ওই গাড়ির পেছনে যে গাড়িটি আছে সে হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে হয়ত ওই গাড়ির ক্ষতি করে নয়ত তার নিজের ক্ষতি হয়। গর্তে পড়ে আর কিছু না হলেও বেশিরভাগ সময় মোটরসাইকেলের পার্টসের ক্ষতি হয়।’
‘আমার তো দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কে চলতে চলতে মুখস্থ হয়ে গেছে কোথায় কোথায় গর্ত আছে। কিন্তু যারা তেমন একটা চলাচল করেন না, মাঝে মাঝে যাওয়া আসা করেন এ সড়কে তারা তো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তাই অচিরেই সড়কের গর্তগুলো ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করা উচিত। তা না হলে গর্তগুলো আরও বড় হবে। আগে যতটুকু ছিল এখন তার চেয়ে অনেক বড় হচ্ছে গর্তগুলো’ বলেন তিনি।
সরেজমিনে মালিবাগ রেলগেট থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত দেখা যায়, সড়কের উভয়পাশে অর্ধশত ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ম্যানহোলকে কেন্দ্র করে। মালিবাগের চৌধুরী পাড়া থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১৫টি গর্ত রয়েছে যেগুলো প্রত্যকটি সৃষ্টি হয়েছে ম্যানহোলের কারণে। আবার একই অবস্থা মেরুল বাড্ডা থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত। অন্যদিকে কুড়িল থেকে বাড্ডা পর্যন্ত প্রায় ১০টি স্থানে মাটি দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উঁচুনিচু গর্ত। এসব গর্তের কারণে যানবাহনে সৃষ্টি হয় ধীর গতি ও যানজট। সেই সঙ্গে ঘটছে ছোট বড় নানান দুর্ঘটনাও।
ওই সড়কে চলাচল করা গণপরিবহন সুপ্রভাত বাসের চালক রফিক উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়কে এসব গর্তের কারণে আমরা প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হই। কখনও কখনও গর্তে পড়ার ভয়ে গাড়ি এদিক ওদিকে নিতে গিয়ে ঘটে দুঘর্টনা। কারণ একই সময় আমার দুপাশেও গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু আমি গাড়ি যাতে গর্তে না পড়ে সেদিকে খেয়াল করতে গিয়ে পাশের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়। আবার কখনও আমার গাড়ি গর্তে পড়েছে তাই ব্রেক করতে হলো। কিন্ত এ একই সময় পেছনে যে গাড়িটা আছে সেটিও একই গতিতে আনতেছিল। হঠাৎ আমার গাড়ির চাকা গর্তে পড়ায় ওই গাড়িকেও ব্রেক করতে হয়। অনেক সময় ব্রেক করলেও হঠাৎ হওয়ায় পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এটা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। তাই এসব গর্তের সংস্কার দরকার।’
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো দায়িত্ব নিয়েছি একদিন হল। বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এ দুর্ভোগটি সত্যি দুঃখজনক। যদি ম্যানহোলের কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে এটি সমাধানের দায়িত্ব ওয়াসার। তবে বিষয়টি যেহেতু আমাদের এরিয়াতে তাই ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে দ্রুত।’
এ বিষয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যানহোলের কারণে গর্তের সৃষ্টি হলে খুব দ্রুত এটি সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।’
সারাবাংলা/এসএইচ/একে