Tuesday 12 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রাণ পাচ্ছে প্রাণের উৎসব


৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:৪৪

হাসনাত শাহীন ।।

একদিকে শাহবাগ থেকে টিএসসি, অন্যদিকে দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমির উল্টোদিক হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল প্রবেশ পথ। দুই পথেই শৃঙ্খলাবদ্ধ জনতার বিশাল লাইন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর দুই পথই মিশে একাকার হয়েছে দুই প্রাঙ্গণের গ্রন্থমেলায়। যার বেশি ভাগই প্রবেশ করেছে বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রাণেরমেলার মূল প্রাঙ্গণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিস্তৃত প্রান্তরে। আর কিছু অংশ প্রবেশ করেছে মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে; যেখানে রয়েছে বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সরাকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং লিটিল ম্যাগের স্টল। বইপ্রেমীদের এমনই উথলে ওঠা ঢেউয়ে ভিন্ন এক রূপ পেলো একুশের চেতনাজড়িত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি মেলা প্রাঙ্গণ এবং স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। শুধু ভিন্ন রূপ নয়, লেখক-প্রকাশকদের বহুল আকাঙ্খিত বইপ্রেমী জনতার এই ঢেউয়ের দোলায়-দোলায় দেখা মিললো প্রত্যাশিত বিক্রির নাও।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার বইমেলার ৮ম দিনে এসে মেলার বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরে বই কেনার আগ্রহি পাঠকের সংখ্যা দেখে তারই প্রমাণ পাওয়া গেলো। এসময় বইপ্রেমীদের সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন স্টল ও প্যাভিলিয়নে কর্মরতরা। তবে তাদের চোখেমুখে ছিলো সন্তুষ্টির আভা। প্রচন্ড কর্মব্যস্তার এই দিনে বিভিন্ন প্রকশনা সংস্থার বিক্রয়কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা সবাই প্রায় একই কথা জানালেন- বিক্রি ভালো হচ্ছে, খুব ভালো হচ্ছে। শুক্রবার নিয়ে দুই দিন আগেও আমরা বিক্রি যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম তার চেয়ে কিছুটা বেশি প্রাপ্তি ঘটেছে।

ছুটিরে দিনের মেলা নিয়ে নালন্দা’র সত্বাধিকারী রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল বলেন, শুক্রবার মেলা অনেক বেশি জমে উঠবে এমন আশা আমাদের ছিলো, তবে যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি হয়েছে। বইপ্রেমীদের এ জোয়ার যদি অব্যাহত থাকে তবে এবারের মেলা বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সফলতা অর্জন করবে বলেও মনে করেন রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল।

বিজ্ঞাপন

কথাপ্রকাশের বিক্রয় ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, আমাদের এখানে সবধরনের বই বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েকদিনের চেয়ে বিক্রি অনেক বেড়েছে। আগামীদিনগুলোতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবারের মেলা সফলতার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তাদের কথার সত্যতা মিলেছে মেলায় আগত প্রত্যেকের হাতে হাতে ব্যাগভর্তি বই দেখে। ঢাকা সেনানিবাসের মাটিকাটা ও বারনটেক থেকে মেলায় এসেছিলেন দুই ‘জা’ মুশতারি তালুকদার সায়মা ও সাবিনা ইয়াসমিন মৌরি। এদের মধ্যে বড় জা সায়মা বলেন, আমি ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের গোয়েন্দা বই পড়তে বেশি পছন্দ করি। আর ছোট জা সাবিনা বলেন, আমি হূমায়ূন আহমেদের বই কিনতেই মেলায় এসেছি। তবে দুজনেরই পছন্দের লেখকের তালিকায় রয়েছেন হূমায়ুন আহমেদ। তারা আরো বলেন, আজকে সব বই কেনা হয়নি। আরো একদিন আসবো। সেদিন পছন্দের সব বই কিনবো।

নিয়মানুযায়ী শুক্রবার দ্বিতীয় ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় আর যথারীতি শেষ হয় রাত ৯টায়।

মোড়ক উন্মোচন

মেলার অষ্টম দিনে ৪৯ টিসহ এখন পর্যন্ত মোট ৯৩টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে।

মেলার নতুন বই 

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, মেলার অষ্টম দিনে নতুন বই এসেছে ২৬৩টি। এর মধ্যে গল্প ৩৪টি, উপন্যাস ৩৩টি, প্রবন্ধের বই ১৯টি, কবিতা ৮৩টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ৭টি, শিশুসাহিত্য ১৩টি, জীবনী ১১টি, মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক ৬টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৫টি, ভ্রমণ বিষয়ক ৫, ইতিহাস বিষয়ক ৩টি, রাজনীতি ৩টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক ২টি, রম্য ৪টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি, ধর্মীয় ৩টি, কম্পিউটার ৩টি, অভিধান ১টি, অনুবাদ ১টি এবং অন্যান্য ২১টি।

উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে জনতা প্রকাশনী থেকে সৈয়দ শামসুল হকের শিশুতোষ গল্প ‘কলম ও নৌকার গল্প’, ভাষাপ্রকাশ এনেছে যতীন সরকারের প্রবন্ধ ‘সংস্কৃতি ভাবনা’, কথাপ্রকাশ এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের কিশোরগল্প ‘কলাপাতা ও লাল জবা ফুল’, সময় প্রকাশন এনেছে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর সাহিত্য ‘এক ডজন একজনে’, কবি প্রকাশনী এনেছে আবুল হাসানের কবিতার বই ‘প্রেমের কবিতা সমগ্র’, পাঠক সমাবেশ এনেছে সৈয়দ আবুল মকসুদের ‘নির্বাচিত সহজিয়া কড়চা’, বিদ্যা প্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের উপন্যাস ‘লুইপার কালসাপ’, চন্দ্রবতী একাডেমী এনেছে আনিসুজ্জামানের ‘স্মরণ ও বরণ’।

মেলার মূল মঞ্চের আয়োজন

অষ্টম দিনে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘চিত্রশিল্পী পরিতোষ সেন : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবুল মনসুর। চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নেন মতলুব আলী এবং সৈয়দ আবুল মকসুদ।

এরপর একই মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি অঞ্জনা সাহা এবং রনজু রাইম। আবৃত্তি করেন মীর বরকত। সঞ্জয় রায়ের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতিসত্র’ এবং ফারহানা চৌধুরীর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা)’ নৃত্যশিল্পীরা।

অন্যদিকে ‘লেখক বলছি…’ মঞ্চে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন নাসরীন জাহান, মিনার মনসুর, রফিকুর রশিদ, আহমাদ মোস্তফা কামাল এবং দ্রাবিড় সৈকত।

সারাবাংরা/পিএম

নতুন বই প্রাণের মেলা বইমেলা বাংলা একাডেমী বিক্রি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর