প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার বাস্তবায়নের দাবি
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:৪৫
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলো পিছিয়ে থাকলে এ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘সমাজে বৈচিত্র্যতার গুরুত্ব: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অধিকার নিশ্চিত না করতে পারবো, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমরা ততোটা পিছিয়ে থাকবো। ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের স্বীকৃতি দিলেও এখনো তারা আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
বাংলাদেশ হবে ঐক্য, মানবিকতা ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র, এটাই হচ্ছে একুশে আর একাত্তরের চেতনা, এটাই এদেশের সংবিধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষেরা পিছিয়ে থাকলে দেশও পিছিয়ে থাকবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’
আলোচনা সভায় উপস্থিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রিফাত পাশা বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যোগ্যতা ও সক্ষমতা অনুযায়ী প্রণোদনা, সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের মুখে প্রতিবন্ধীদের জন্য যে এক শতাংশ কোটা ছিলো, সেটিও বাতিল হয়ে গেছে। পূর্ণ সক্ষম ব্যক্তিদের সঙ্গে অক্ষম ব্যক্তিদের প্রতিযোগিতা অনেকটা সাগরে নেমে সাঁতার দেওয়ার মতো।’
কালের কণ্ঠের সাংবাদিক নিখিল দত্ত বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বর্তমানে শারীরিকভাবে খানিকটা অক্ষম হওয়ার পর থেকেই আমি এদেশে প্রতিবন্ধীদের কী কী সীমাবদ্ধতা ভোগ করতে হয়, সেসব খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান যেমন হাসপাতাল, এয়ারপোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য বিশেষ উপায় এখনো তৈরি হয়নি। শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও যেনো অপ্রতিকূল পরিবেশে তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে সেদিকে নজর দেয়া রাষ্ট্রের একান্ত দায়িত্ব।’
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নাদিরা খানম বলেন, ‘আমাদের নিয়ে সমাজের অধিকাংশ মানুষ একটা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। রাষ্ট্রও যদি আমাদের পাশে না থাকেন তবে আমাদের যাওয়ার আর জায়গা থাকবে না। আমরা সমঅধিকার চাই এবং বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্রের দাবি জানাই।’
দলিত শ্রেণি পরিষদ আন্দোলন-এর সভাপতি মনী রাণী দাস বলেন, ‘পেশাগত কারণে সমাজে আমাদের খাটো করে দেখা হয়। আমরা শিক্ষা ও চিকিৎসা বঞ্চিত, এমনকি আমাদের মেয়েরা কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে পারলেও চাকরি দেওয়া হয় না।’
সচেতন সমাজ সেবা হিজড়া সংঘের সভাপতি ইভান আহমেহ কথা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সেভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া আমরা পড়ালেখার সুযোগ পাই না , পেলেও চাকরি দেওয়া হয় না। তাই আমাদের হয়ে কথা বলার জন্য সংসদে আমাদের মধ্যে একজনকে স্থান দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।’
আলোচনা সভায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর যথাযথ বাস্তবায়ন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সকল ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত, দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করা ও বৈষম্য নিরোধ আইন পাশের আহ্বান জানানো হয়।
সারাবাংলা/ওএম/এমআই