হুমকি এলে উচ্ছেদ দ্বিগুণ গতিতে হবে, মন্ত্রীর পাল্টা হুঁশিয়ারি
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: হুমকি দিলে কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে উচ্ছেদের কাজ দ্বিগুণ গতিতে করা হবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর আনু মাঝির ঘাট এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন। ওইদিন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছিলেন, উচ্ছেদ শুরুর পর তিনি হুমকি-ধমকি পাচ্ছেন। এছাড়া উচ্ছেদকারী দুই ম্যাজিস্ট্রেটকেও হুমকি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘হুমকি-ধমকি দেবে, কিন্তু এগুলো আমলে নেওয়ার মতো কিছু না। আবার হুমকি দিয়ে কেউ পার পাবে না। এখন আগের বাংলাদেশ নেই। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা অনেক শক্তিশালী। ডিজিটাল প্রযুক্তি আছে। হুমকি যারা দেবে, তাদের অবশ্যই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ হুমকি দেবে, আর সেজন্য কাজ বন্ধ হয়ে যাবে, এমন ভাবা যাবে না। হুমকি এলে বরং কাজের গতি দ্বিগুণ হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করছে, উচ্ছেদ শুরু হয়েছে, এরপর মনে হয় আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। সেটা হবে না। আমি নিজে মনিটরিং করছি। কাজ হবেই।’
এসময় ভূমিমন্ত্রী চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের উচ্ছেদ কার্যক্রম কখন শুরু হবে সেটা গণমাধ্যমকে দ্রুত জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
কর্ণফুলীর তীরে কোনো অবৈধ স্থাপনা রাখা হবে না বলে আবারও জানান ভূমিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অবৈধ কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না। কেউ কোনো ছাড় পাবে না। আমরা দেশের জন্য কাজ করছি, জনগণের জন্য কাজ করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় কাজ করছি।’
পাঁচদিন ধরে টানা অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত ২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও আলোচিত এক শিল্পপতির মালিকানাধীন একটি হিমাগার এখনও রয়ে গেছে। সেটির সামনের অংশ ভাঙ্গা হলেও মূল অংশে আঘাত পড়েনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মন্ত্রী নিজেই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে বলেন, ‘একটা কোল্ডস্টোরেজ আছে। আমি শুনেছি, সেখানে কয়েক হাজার টন মাছ আছে। আমি প্রশাসনকে বলেছি, তাদের সঙ্গে বসেন। তাদের টাইম দেন। কতদিন সময় লাগবে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু প্রচুর সময় দেওয়া যাবে না এবং কোল্ড স্টোরেজও থাকতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধ কোনকিছুই থাকবে না। কোনটাই ছাড় হবে না। আবারও শো-অফ করার জন্য ধুমধাম করে ভেঙ্গে ফেলব, এমনও হবে না। কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না। কোনো ব্যবসায়ীর ক্ষতি করা হবে না। ব্যবসায়ীরা অর্থনীতিকে অবদান রাখছেন। আমরা যে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছি, এতে বরং ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে।’
গত পাঁচদিনের অভিযানে নগরীর সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত এলাকায় ১০ একরের মতো জায়গা দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচটি খালের প্রবেশমুখ উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদ শেষে শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আবর্জনা অপসারণের কাজ শুরু করেছে।
উদ্ধার করা জায়গায় ‘দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা’ অথবা ‘পল্টন জেটি’ বানানোর পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দৃষ্টিনন্দন কিছু কাজ করতে চাই। ভালো পরিবেশে যাতে ভালোভাবে কর্ণফুলী নদীর সৌন্দর্য্য দেখা যায়। এছাড়া পল্টন জেটি টাইপের কিছু করারও চিন্তাভাবনা করছি।
‘কারণ বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে প্রচুর জাহাজ আসে কার্গো নিয়ে। জেটিতে সিরিয়ালের কারণে সেগুলো অনেক সময় আউটারে বসে থাকে। এতে ডেমারেজ দিতে হয়। আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ডেমারেজের কারণে চলে যাচ্ছে। পল্টন জেটি করে সেই জাহাজগুলোকে যদি সুযোগ করে দিতে পারি, ভালো হবে। তবে সেটা তো আর আমরা করবো না। বন্দর কিংবা বিআইডব্লিউটিসি, তাদের সঙ্গে কথা বলব। অথবা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমেও হতে পারে।’ বলেন ভূমিমন্ত্রী।
ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নদীর পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহীর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি। একটি কর্মশালা উদ্বোধন করতে গিয়ে কথা হয়েছে। আমি বলেছি, যত সরকারি জায়গা বেদখল আছে, রিকভার করেন। এটা আমি প্রতিমাসে রিপোর্ট নেব যে কোন জেলায় কোন ডিসি কতটুকু জায়গা উদ্ধার করেছেন।
কর্ণফুলীর তীরে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসক ছাড়াও মন্ত্রীর সঙ্গে উচ্ছেদকারী দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান মুক্ত এবং তৌহিদুর রহমান ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই