Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসুর তফসিল ঘোষণা আজ, ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিয়ে প্রশ্ন


১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৭

।। কবির কানন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। তবে ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য যে নির্বাচন, সেই ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান কতটা আছে ক্যাম্পাসে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৯ জানুয়ারি সিন্ডিকেটে ডাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি নিশ্চিত হয়। এটার পরেও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ভিন্ন মতাবলম্বী ছাত্রদের ওপর একাধিক হামলার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রদলসহ বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ হলগুলোতে প্রশাসনের পরিবর্তে ছাত্রলীগের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বজায় রয়েছে এখনো। ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ করেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৭ফ্রেুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় ‍উপাচার্য বরাবর ডাকসু নির্বাচনের তফসিল পেছানোসহ সাত দফা দাবি জানায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে তাদের সেসব দাবি বিবেচনায় না নিয়েই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করছে কর্তৃপক্ষ।

ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথায় ছাত্রলীগ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করে তফসিল ঘোষণা করা উচিত ছিল। সহাবস্থান নিশ্চিত না করেই তফসিল ঘোষণার ফলে সহাবস্থানের বিষয়টি আর এগোবে না উল্লেখ করে তারা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে পুনঃর্বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তফসিল ঘোষণর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে তফসিল ঘোষণার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছি। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা তফসিল ঘোষণা করছে; আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা সকল পক্ষকে আবারও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাব যেন নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে দিতে পারি।’

ক্যাম্পাসে সহাবস্থান কতটা আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে। শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রদের গনতান্ত্রিক শূন্যতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই গণতান্ত্রিক শূন্যতা ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পূরণ হবে।’

প্রসঙ্গত, সকল ছাত্রসংগঠনের মধ্যে সহাবস্থান আছে উল্লেখ্য করলেও এই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ডাকসু নির্বাচনের আলোচনার মধ্যে বিরোধীমতাবলম্বী শিক্ষার্থীদের ওপর একাধিক হামলার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক বোরহান উদ্দিন ও ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। যদিও তারা হামলার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করেছে।

এদিকে, ন্যূনতম তিনমাস সহাবস্থান নিশ্চিত করাসহ ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানানো ছাত্রদল তফসিল ঘোষণার কথা শুনে হতাশা প্রকাশ করেছে। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সহাবস্থানের যে দাবি জানিয়েছি সেগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এগেুলো বিবেচনায় না দিয়ে তফসিল ঘোষণা করে তাহলে আমরা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে পুর্নবিবেচনা করব। তখন আমাদের কোনো পথ খোলা থাকবে না। সহাবস্থান নিশ্চিত না করে ডাকসু নির্বাচন করলে সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি।

আরেকদিকে, ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করা, শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মত প্রকাশ নিশ্চিত করাসহ একাধিক দাবিতে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর গত ৩ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়। এর আগে তারা সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল করে এই দাবি জানায়। কিন্তু তাদের দাবি না মেনেই তফসিল ঘোষণার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো কথায় আমলে না নিয়েই কর্তৃপক্ষ তফসিল ঘোষণা করছে। এরপরেও আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি থাকবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়েও পুনর্বিবেচনা থাকবে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্রসংগঠনগুলো সহাবস্থান নিশ্চিত করা এবং ছাত্রদের গণতান্ত্রিক দাবি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও সহাবস্থান নিশ্চিত হয়নি। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো মিছিল মিটিং করতে পারছে কিন্তু হলগুলোতে তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। হলের সিটগুলো ছাত্রলীগ দখল করে রেখেছে। হলে প্রশাসনের কোনো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়নি।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান কিছুদিন আগে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ডাকসু সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোকে তাদের (প্রশাসনের) ওপর আস্থা রাখতে বলেন। উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের সুন্দর একটা ব্যবস্থাপনা আছে। এখানে শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটির নিয়মিত নির্বাচন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; তাই ডাকসু নির্বাচন নিয়েও কারও অনাস্থা বা শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এর জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করব।

সারাবাংলা/কেকে/এমআই

ডাকসু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর