আইএনজিও’দের বিলাসিতায় অপচয় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের অর্থ: সিসিএনএফ
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:০০
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
কক্সবাজার: আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো(আইএনজিও) রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ তাদের কর্মীদের ভোগ-বিলাসে ব্যয় করছে বলে অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার ‘সিএসও-এনজিও’ ফোরাম (সিসিএনএফ) এর কো-চেয়ারম্যান আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা।
সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মোরশেদ চৌধুরী খোকা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় হচ্ছে ‘আইএনজিও’দের বিলাসিতায়। ফাইভ স্টার হোটেলে থাকা-খাওয়া, দামি গাড়ি ব্যবহার, বাড়তি বেতনসহ নানা সুযোগ-সুবিধায় অপচয় করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খোকা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা হিসাবের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। নয়ত একসময় দাতা-সংস্থারা বিমুখ হয়ে যাবে। তা এসব মনিটরিং করা সম্ভব না হয়, তাহলে আগামীতে রোহিঙ্গা সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে কক্সবাজারে।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোট ১২৩টি দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিও রয়েছে ২১টি এবং কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও রয়েছে ৫টি। অন্যান্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কাজ করছে।
এসব এনজিওরা রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ আনছে। এসব অর্থের বড় একটি অংশ খরচ হচ্ছে আন্তর্জাতিক এনজিওতে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিলাসিতায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বরাদ্দকৃত টাকা হিসাব অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে না। অসংখ্যবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে এই বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি।
মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, নিয়মিত মনিটরিং এর মাধ্যমে আইএনজিওদের নির্দিষ্ট নিয়মে আনতে হবে। বিদেশি এনজির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ স্থানীয়দের চাকরি দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গত ২০১৭ সালে, জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বা যৌথ সাড়া পরিকল্পনা অনুসারে রোহিঙ্গা সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশে মোট ৪৩৪.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ প্রয়োজন ছিল। এই পরিকল্পনার মোট ৩১৬.৯ মার্কিন ডলার জেআরপি পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে। যা ২০১৭ সালে প্রাপ্ত মোট তহবিলের ৩৫.৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় মোট ৪৯৪.২ মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাংলাদেশে গ্রহণ করা হয়।
একইভাবে জেআরপির আওতায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৯৫০.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যার বিপরীতে জেআরপি পরিকল্পনার মাধ্যমে মোট ৬৫৫.০ মিলিয়ন (৬৮.৯ শতাংশ) মার্কিন ডলার অর্থ রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় আসে। অন্যদিকে এই পরিকল্পনার বাইর থেকে এসেছে মোট ৭২.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চলতি ২০১৯ সালে, জেআরপির আওতায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯২৫.০ মার্কিন ডলার বাজেট ধরা হয় এবং জেআরপির মাধ্যমে অর্জন ধরা হয়েছে ৫৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই হিসেবে প্রতি পরিবারের জন্য এক বছরে ২১৫ মার্কিন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে।
এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ‘সিএসও-এনজিও’ ফোরাম (সিসিএনএফ) এর কো-চেয়ারম্যান ও কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম ও মুক্তি কক্সবাজার সমন্বয়ক অশোক কুমার সরকারসহ ওই ফোরামের নেতৃবৃন্দ।
সারাবাংলা/এনএইচ