বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ মার্কিন সিনেটরদের
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:১১
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও গণতন্ত্রের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রভাবশালী মার্কিন সিনেটরদের একটি দ্বিপক্ষীয় দল এবং একজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির কাছে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড প্রধান অ্যাডম ফিলিপস ড্যাভিডসন।
ডেভিডসনের উদ্বেগ অনুসরণ করে কয়েক ঘণ্টা পর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেসম্যান এলিয়ট ইঙ্গেলের নেতৃত্বে ছয়জন প্রভাবশালী মার্কিন আইনপ্রণেতারা পম্পেও বরাবর একটি চিঠি দেন। উল্লেখ্য, ইঙ্গেল হচ্ছেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রধান।
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে উল্লেখ করে ড্যাভিডসন নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে তাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণ, সহিংস চরমপন্থীতা সামাল দেওয়া, মুসলিমদের কাছে পৌঁছানো, মানবাধিকার সহায়তা বিষয়ক সমর্থন, দুর্যোগে ত্রাণ সরবরাহ ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। তবে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য সঠিক ধারা নির্দেশ করে না।
ড্যাভিডসন আরও বলেন, সীমান্ত কৌশলের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক প্রয়োজনীয় এবং এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক, নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরিতেও অবদান রাখে।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে পাঠানো চিঠিতে ইঙ্গেল নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি লিখেছে, ভোট নিয়ে অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উত্থাপিত অবিশ্বস্ততার অভিযোগের আলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি পদক্ষেপ নিতে চায় সে বিষয়ে একটি আউটলাইন জানানোর অনুরোধ করছি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ এগিয়ে নিতে সেখানকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারকে সমর্থন দেওয়া জরুরি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, চলতি বছর আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনগুলোকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অঙ্গীকার ও শ্রদ্ধাবোধের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সামনে আসা উচিত। এর শুরু করা উচিত বাংলাদেশ দিয়ে।
বাংলাদেশের দৃঢ় ও গৌরবময় গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে কংগ্রেসম্যানরা চিঠিতে বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনের প্রচারণার সময় সংঘটিত সহিংসতা, গণ-গ্রেফতার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর দমন অভিযান চালানোতে তারা হতাশ।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৯৬ শতাংশ নির্বাচনী আসনে জয়ী হয়েছে। ২০১৪ সালে দলটি যে পরিমাণ আসনে জয়ী হয়েছিল এই হার তার চেয়ে বেশি। যদিও ২০১৪ সালে একটি প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল এবং অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে হয়েছিল আওয়ামী লীগ।
সারাবাংলা/আরএ/এনএইচ