জবিতে ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব, বাধার মুখে স্থগিত কমিটির দুই নেতা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৯
।। জবি করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখার ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে শোডাউন দিতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির অন্যান্য পদধারী নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ তাদের কর্মীদের আটকে রাখে স্থগিত কমিটিরই অন্যান্য পদধারী নেতাকর্মীরাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই সময়ে নতুন কমিটির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এই সময়ে তারা তাদের অনুগত কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে শোডাউন দেন। শোডাউন শেষে তারা ছাত্রসংসদের রুমে যায়। এ সময় তাদেরকে সেখানে রেখেই অবকাশ ভবনে তালা মেরে অবরুদ্ধ করে দেয় স্থগিত কমিটির অন্যান্য পদধারী নেতাকর্মীরা। এই সময় তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরে স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানে তারা বলেন বর্তমান কমিটির দুজনেই বিবাহিত এবং তারা ক্যাম্পাসের আশেপাশে ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের এর সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে ক্ষুব্ধ ছাত্র নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই কমিটি আসার পরেই ক্যাম্পাসের টিএসসি, আশেপাশের বিভিন্ন মার্কেট থেকে চাঁদাবাজি, ইয়াবা ব্যবসা করতে ছাত্রলীগের ক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে। একই সাথে যারা প্রকৃত ছাত্রলীগ করে তাদেরকে ক্যাম্পাসে আসতে নানাভাবে বাধা প্রদান করেন।
স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাকিল বলেন, এই কমিটি আসার পর থেকেই প্রায় প্রতি দিনই মারামারি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আমরা এর পরিত্রাণ চাই। উত্তীর্ণ কমিটির পুনর্বহাল হলে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এভাবে ছাত্রলীগের নাম বিক্রি করে চাঁদাবাজিসহ মাদক ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসা আগে কখনো ছিল না। এখন এগুলো ক্যাম্পাসের হরহামেশা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদে নেমেছি। আমরা এগুলো আর ক্যাম্পাসে হতে দেব না।
স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল আফসার বলেন, ক্যাম্পাসের রাজনীতিকে সুষ্ঠু ধারায় ফিরিয়ে আনতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা ক্যাম্পাসে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতিতে আছি।
অপর এক বক্তব্যে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিসাত বলেন, এই কমিটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ব্যর্থ কমিটি। মেয়াদ পার হয়ে গেলেও তারা এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারে নি। এই ব্যর্থ কমিটি পুনর্বহাল হোক সেটা আমরা চাই না। আজকের শত শত ছাত্রলীগের কর্মীদের এই প্রতিবাদই বলে দেয় আমরা এই কমিটি আর চাই না।
স্থগিত কমিটির সহ-সভাপতি আল আমিন বলেন, এই কমিটি আসার পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই মারামারি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আমরা এর পরিত্রাণ চাই। উত্তীর্ণ কমিটির পুনর্বহাল হলে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ছাত্রলীগের নাম বিক্রি করে মাদক ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসা আগে ছিলো না যা এখন ক্যাম্পাসে হরহামেশা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদে নেমেছি। স্থগিত কমিটির ছত্রছায়াতে চাঁদাবাজিসহ যত অপকর্ম হচ্ছে আমরা সেগুলো আর হতে দেব না।
তবে আটকে রাখার ব্যাপারে অস্বীকার করেছেন স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম। অবরুদ্ধ রাখার ছবি ও ভিডিও চিত্র থাকলেও তিনি এই ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ও স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে গেলেও এটা কোন সাংগঠনিক কাজ ছিলো না। তবে তালা মেরে রাখার বিষয়টি জানানে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও তরিকুল রাসেল কমিটির বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগে তদন্তের দায়িত্বে থাকা আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, তাদের সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকার পরেও ক্যাম্পাসে শোডাউন দিয়ে ছাত্রসংসদে প্রবেশ করা ঠিক হয় নি। আমাদের রদন্ত কাজ চলছে। আমরা আজকের ঘটনাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন ধরেননি।
উল্লেখ্য, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে সকল কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। এর পর থেকেই স্থগিত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির দাবিতে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে আসছে পদবঞ্চিত এবং নিগৃহীত ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা।
সারাবাংলা/জেআর/এসবি