Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্গম চরেও ঠাঁই মিলছে না ভূমিহীনদের


১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫২

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ভাঙা-গড়ার মধ্যেই চলছে উপকূলীয় অঞ্চল।  দিন দিন বাড়ছে বাস্তুহারার সংখ্যা। আশ্রয়ের খোঁজে দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন ভিটিমাটি হারা হাজারো মানুষ।  অথচ নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা থাকলেও পুনর্বাসনের নামে ভূমি চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের দখলে।  এমন চিত্র নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে। সম্প্রতি এই এলাকাটি ঘুরে এসেছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সাদ্দাম হোসাইন। এ নিয়ে আজ থাকছে পাঁচ পর্বে তৈরি ধারাবাহিক প্রতিবেদনটির  প্রথম পর্ব

বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ আর প্রমত্তা মেঘনার হেয়ালিপনায় প্রতিনিয়ত নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের একরের পর একর বসতবাড়ি ও কৃষি জমি। নিঃস্ব হচ্ছে হাজারো মানুষ। ভূমিহীন হয়ে পরিবারগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে এ ধার থেকে ও ধারে। কিন্তু ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এসব ভূমিহীন পরিবারের  দুঃখ-দুর্দশা দেখার কেউ নেই। ফলে প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার মাঝে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে ফেরা মানুষগুলোর জীবনে সুখের ছায়া আর দীর্ঘ হয় না। তার আগেই একদিকে নদীভাঙনের হাহাকার, অন্যদিকে প্রভাবশালীদের অত্যাচারে সর্বস্ব হারিয়ে থমকে দাঁড়ায় বেঁচে থাকার স্বপ্নও! তবু তারা ঘুরে দাঁড়াতে চায়।   আশায় বুক বেঁধে ফের পাড়ি দিতে চায় জেগে ওঠা এক চর থেকে অন্য চরে—জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার বাসনায়। কিন্তু আগ্রাসী নদী মেঘনার চেয়ে আরও বেশি আগ্রাসী মানুষদের অত্যাচারে পিষ্ঠ এখানকার নদী ভাঙা মানুষরা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) হিসাব অনুযায়ী, বিগত ৭০ বছরে নোয়াখালীতে প্রায় ২০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি ক্ষয় হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে এক হাজার বর্গকিলোমিটার মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত  সংস্থা ‘অ্যাকচুয়ারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর (ইডিপি) গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী উপকূলে ৫৭৩ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদী থেকে জেগে ওঠে। আবার একই সময়ে জেগে ওঠা ভূমির ১৬২ বর্গকিলোমিটার নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে টিকেছে ৪১১ বর্গকিলোমিটার। উপকূলের এমন ভাঙাগড়ার কারণে বাস্তুহারা হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

কিন্তু নতুন জেগে ওঠা এসব খাস জমি বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে বন্দোবস্ত নিয়ে দখল করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এমনকি প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য থেকে সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চলও রেহায় পায়নি। অথচ এসব খাস জমি নিয়মানুযায়ী বসবাস কিংবা চাষের উপযোগী হলে তা বন্দোবস্ত পাওয়ার কথা নদীভাঙা ভূমিহীন পরিবারগুলোর। আর তা ভূমিহীনদের মাঝে সুষম বণ্টন করার দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী ও ভূমি কর্মকর্তাদের।

এ অঞ্চলের ভূমিহীনদের অভিযোগ, স্থানীয় উপজেলা ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা খাস জমি ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীদের কাছে বণ্টন করে দিচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও বিনামূল্যের জমি হাজার টাকা ব্যয় করে ভূমিহীনরা বন্দোবস্ত পেলেও তার দখল দিচ্ছে না প্রভাবশালীরা।

ঠিক তেমনই একজন ভূমিহীন জহর আলী। নদী ভাঙনের কারণে ৭৫ বছরের জীবনে ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয়েছে ৫ বার। হারিয়েছেন বাপ-দাদার সম্পত্তি। এই ভূমিহীনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  ৬০-এর দশকে তার বাড়ি ছিল হাতিয়া দ্বীপের সাহেবানীর চরে। সেখান থেকে নদীভাঙনের শিকার হয়ে পরে মফিজিয়া এলাকায় বাসা বাঁধেন। সেখানেও হানা দেয় আগ্রাসী মেঘনা। এরপর নলচিরা ও আফাজিয়া হয়ে বর্তমানে ঠাঁই হয়েছে বুড়িরচরের দক্ষিণ রেহানিয়া এলাকার সরকারি বেড়িবাঁধে। কিন্তু এই দীর্ঘ সংগ্রামে ভূমি অফিস থেকে পাননি একটুরো খাস জমি বন্দোবস্ত। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন, ‘সেই কথা বলে আর লাভ কী? কত বার ঘুরেছি ভূমি অফিসের বারান্দায়। চেয়ারম্যান মেম্বার আর বড়লোকেরা টাকা দিয়ে ভূমি নিয়ে যায়। আর আমরা টাকা দিতে পারিনি বলেই আজও বেড়ির পাশেই পড়ি রইছি।’

শুধু জহর আলী নন, তার মতো অনেকেই এরই মধ্যে বাস্তুহারা হয়েছেন। ওয়েব স্টার নামের একটি বিদেশি সংস্থার  তথ্য মতে, হাতিয়ার ৫৫ ভাগ অর্থাৎ ৩৫-৭০ বছর বয়সী মানুষ কমপক্ষে ৪-৬ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। দ্বীপের ৮০ ভাগ লোক কৃষক। এর সিংহভাগই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাসবাস করছে। ভিটেমাটি ভেঙে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে অনেকেই। আর এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু একদিকে ভাঙছে, অন্যদিকে চর জাগলেও সে চরে এসব বাস্তুহারা ভূমিহীনদের ঠাঁই হয় না। আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং ব্যক্তি প্রভাব না থাকায় জেগে ওঠা নতুন এসব চরে ভূমিহীনরা বন্দোবস্ত নিতে পারে না। কারণ এসব খাস জমি বন্দোবস্ত পেতে হলে প্রতিটি জমির বিপরীতে ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। অথচ এসব জমি পাওয়ার কথা ভূমিহীনদের।

সংস্থাটির তথ্য মতে, ১৮৯০ সাল থেকে নোয়াখালী উপকূলের মূল ভূ-খণ্ডে ভাঙন শুরু হয়। এরফলে জেলার চরলরেঞ্জসহ (সুবর্ণচরের একটি অংশ) হাতিয়া উপজেলার  হরনী, চানন্দী, সুখচর ও নলচিরাসহ চারটি ইউনিয়ন মেঘনায় সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পাশাপাশি হাতিয়া উপজেলার চরকিং, চরঈশ্বর, তমরদ্দিন ও সোনাদিয়া ইউনিয়নসহ আরও চারটি ইউনিয়নের বিশাল এলাকা মেঘনার আগ্রাসনে নিমজ্জিত হচ্ছে। এতে হাজার কোটি টাকার সম্পদহানি ছাড়াও পাঁচ লক্ষাধিক অধিবাসী ভিটেমাটি হারিয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের হিসাব মতে, ভাঙনের পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে দ্বীপের চারপাশে নতুন করে অন্তত ২০টির বেশি চর জেগে উঠেছে। এর মধ্যে বয়ারচর, নলেরচর, কেরিংচর, ঢালচর, মৌলভীরচর, দমার চর, কালাম চর, চর ওসমান এবং নিঝুমদ্বীপসহ প্রায় ২০টি চরে কিছু সংখ্যক ভূমিহীনরা বসবাসের সুযোগ পেলেও তার অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। যেসব ভূমিহীন সেসব চরে বসতি গড়ে তুলেছে, তারাও প্রভাবশালীদের অত্যাচার নির্যাতনে চর ছেড়ে  পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

১৯৯৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত গেজেটে খাস জমি বন্দোবস্ত নীতিমালার (সংশোধনী) মতে, ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, নদীভাঙা পরিবার, সক্ষমপুত্রসহ বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা পরিবার, কৃষি জমিহীন ও বসতভিটাহীন পরিবার, অধিগ্রহণের ফলে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে এমন পরিবার, ১০ শতাংশ বসতবাড়ি আছে কিন্তু কৃষিযোগ্য জমি নেই এমন কৃষি নির্ভর পরিবারকে সরকারের খাস জমি বিনামূল্যে বন্দোবস্ত দিতে হবে। নীতিমালায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খাস জমিগুলোতে দখলে থাকা ভূমিহীনরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূমি বন্দোবস্ত পাবে।

কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী জেগে ওঠা চরের খাস জমিতে যেসব ভূমিহীন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে জমি দখল করে বসবাসের উপযোগী করে বসতবাড়ি করেছে, সেসব ভূমিহীনের ভাগ্যে আজও ভূমি বন্দোবস্ত নিশ্চিত হয়নি। অথচ নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, দখলে থাকা ভূমিহীনরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্দোবস্ত পাবে। উল্টো ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে সেসব খাস জমি দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।

উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, হাতিয়ায় জেগে ওঠা নতুন চরগুলোতে মোট খাস জমি রয়েছে ৭৮ হাজার ৮৭৮ দশমিক ২২ একর। এসব জমির মধ্যে কৃষির উপযোগী রয়েছে ৫০ হাজার ১২৩ দশমিক ৮৩ একর এবং কৃষির অনুপযোগী রয়েছে ২৮ হাজার ৭৫৪ দশমিক ৩৯ একর। আর এ মোট জমির মধ্যে ভূমিহীনদের জন্য বন্দোবস্ত উপযোগী ভূমি রয়েছে ৫০ হাজার ১২৩ দশমিক ৮৩ একর। ভূমিহীনদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত এসব ভূমি তাদের মধ্যে সঠিকভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন চর দমার চরে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি একরজুড়ে ধান চাষ হয়েছিল। কিছুদিন আগেই ধান কাটা হয়ে গেছে তার নমুনা দেখা গেলো ধানের চিহ্ন থাকায়। কিন্তু তেমন কোনো মানুষজন নেই সেখানে। প্রতিটি জমির পাশে ভিটেমাটির চিহ্নও পাওয়া গেছে। তবে তাতে ঘর নেই।

স্থানীয় রাখালদের কাছ থেকে জানা গেলো, এসব ভিটেমাটিতে এক সময় মানুষের বসবাস ছিল।  তারা জানায়, সেখানকার পাশে থাকা বনের ভেতরে আস্তানা করেছিল কয়েকজন জলদস্যু ও বনদস্যু গ্রুপ।  তারাই হাতিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে সেখানে ভূমিহীনদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।  পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি।  লুটপাট করেছে জিনিসপত্র।   একপর্যায়ে  ১ হাজার ২০০ ভূমিহীন পরিবার সেখান থেকে পালিয়ে এখন হাতিয়ার বিভিন্ন বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার ও সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছে।

তেমনি অমানবিক নির্যাতনের শিকারদের একজন বাদশা মিয়া (৫৫)। গত দশ বছরে প্রায় ১৫ বার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সপরিবারে দমার চরের এই বাসিন্দা। নাম তার বাদশা হলেও এখন শুধু স্ত্রী, চার ছেলে ও চার মেয়ে ছাড়া কিছুই নেই তার। তাই বাদশা মিয়ার রাজত্বে এখন শুধুই হাহাকার। কারণ পরিবারের সবাই তার ওপর নির্ভরশীল। সংসারের  দশ সদস্যের ভরণ-পোষণের ভার টানতে টানতে তিনি এতই ক্লান্ত যে, এখন আর প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগও নেই। কারণ তিনি জেনে গেছেন, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে কোনো প্রতিকার মিলবে না।

বাদশা মিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘হাতিয়ার উত্তর মাথায় চারবার ধইরা (নদী) ভাঙনের পরে ইয়ানে (এখানে) চর উঠলে জমিন কদ্দূর ছাপ (জমি একটুকু পরিষ্কার) করি লই চনের ঘর (খড়ের তৈরি ঘর) একখান তুলছিলাম।   অনেকবার ঘর তুলেছি।  কিন্তু থাকতে পারিনি। যতবারই ঘর তুলছি ততবারই নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ভূমিদস্যুরা আমাদের মারধর করি ঘরদোর লুটপাট করি আগুন ধরায় দিছে।  এরপর আঙ্গো ভিডা (ভিটা) কাটি জমিন বানায় চাষ করছে ওরা। এভাবেই প্রায় ১৫ /২০ বার নির্যাতনের শিকার হইছি। কিন্তু কোনো বিচার পাই নো।  থানাওলারাও হেগো পক্ষে। কোনো মামলা পর্যন্ত নে নো। ’ এই চরে তালিকাভুক্ত ১ হাজার ২০০ শ ভূমিহীন পরিবার ছিল বলেও তিনি জানান।

সবাইকে ভূমি অফিস থেকে জমি বন্দোবস্তের টোকেন দিয়েছে উল্লেখ করে বাদশা মিয়া বলেন, ‘এ টোকেন লই হিয়ানে ঘর তুলছি আমরা।  কিন্তু আমরা আইজও জমির মালিক হইতে পারিনি। ’ হাতিয়া প্রশাসনও তাদের পক্ষে দাঁড়ায়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

একই কথা বললেন ওই চরের অন্য এক ভূমিহীন বাসিন্দা জামাল উদ্দিন (৫৫)।  তিনি জানান, ওই চরে বসবাসের জন্য হাতিয়া ভূমি অফিস থেকে বন্দোবস্তের জন্য টোকেনও দিয়েছিল তাদের। কিন্তু সে টোকেন তাদের পকেটেই ঘুরছে। জমির কোনো চিহ্ন নেই। ভূমি অফিস থেকে পাওয়া টোকেন নিয়ে চরে বসবাস শুরু করলেও দুর্বৃত্তদের অত্যাচারে অতিষ্ট জামালরা সে চর বহু আগে ত্যাগ করে এখন বেড়িরবাঁধের ধারে বসবাস করছেন।

হাতিয়া নদী ভাঙা ভূমিহীন পুনর্বাসন সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘দমার চরে ১২শ ভূমিহীনের ভূমি বন্দোবস্ত পাওয়ার টোকেন আছে। কিন্তু সে টোকেন আমরা ভূমিহীনরা পকেটে নিয়ে ঘুরি। জমি পাই না। আমাদের প্রাপ্য জমি প্রশাসনের লোকজনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা দখল করে আছে। আমরা অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছি।’

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান শিকদার বলেন, ‘ভূমিহীনদের নির্যাতন করা হয়েছে এমনটা শুনেছি। তবে, এটা আজ থেকে ৬ থেকে ৭ বছর আগে।  শুনেছি এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ওই সময়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।  তার মানে নির্যাতনের বিরুদ্ধে থানা অভিযোগ আমলে নেয়নি, এ কথা ঠিক নয়।  আমার সময় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  তবু কোনো নির্যাতিত পরিবার যদি অভিযোগ করে, সেটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একই কথা বললেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস।  তিনি বলেন, ‘ভূমিহীনরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এমন তথ্য আমার কাছে নেই।  তবে আপনার কাছ থেকে শুনেছি।  বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।  একইসঙ্গে যারা প্রকৃত ভূমিহীন, তাদের কীভাবে পুনর্বাসন করা যায়, সে বিষয়ও পর্যালোচনা দেখা হবে। ’ কেউ দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

আগামীকাল দ্বিতীয় পর্বে পড়ুন: জমি বনের, বন্দোবস্ত দিচ্ছে ভূমি অফিস

সারাবাংলা/এসএইচ/এমএনএইচ

উপকূলীয় অঞ্চল নোয়াখালীর চর ভূমি বন্দোবস্তে অনিয়ম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর