নগরীতে ভারি যান চলাচল: ব্যবসায়ীদের ‘চাপে’ পিছু হটল সিএমপি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৯:৫১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বন্দরনগরীর কয়েকটি সড়কে দিনের বেলা ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করার একমাসের মাথায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। কয়েকজন ব্যবসায়ী ও পরিবহন নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর সিএমপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ভারি যানবাহন সড়কে চলাচল করতে পারবে।
এর আগে, ট্রাকচাপায় এক কলেজ ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর গত ১৭ জানুয়ারি থেকে নগরীর বন্দরকেন্দ্রিক ৮টি সড়কে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভারি যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয় সিএমপি। ভারি যানবাহনের মধ্যে আছে- পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লং ভেহিক্যাল, প্রাইম মুভার। ঘোষণার পর কয়েকদিন সড়কে অভিযানও চালিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় অভিযান থেমে যায়।
এরপর বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সিএমপি কমিশনার মো.মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো.মাহবুবুল আলম। এসময় ছিলেন চেম্বারের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের সাধারণ সম্পাদক অহীদ সিরাজ স্বপন এবং চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক মালিক ও কন্ট্রাক্টর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জহুর আহাম্মদ ও উত্তর চট্টগ্রাম ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.আহসান উল্ল্যাহ চৌধুরী হাসান।
সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে চেম্বারের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে- ভারি যানবাহন রাত ৮ টার পরিবর্তে সন্ধ্যার পর থেকেই চলাচলের অনুমতি দেওয়া, চাল-ডাল ও গম পরিবহনের জন্য সিএমপি ও চেম্বারের স্টিকার লাগিয়ে ৫০টি গাড়ি দিনের বেলায় চলাচলের বিশেষ অনুমতি দেওয়া উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া, শুক্র ও শনিবার সার্বক্ষণিক সব ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি করেছেন চেম্বার নেতারা। পুলিশ বিবেচনা সাপেক্ষে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে।
নগরীর ওআর নিজাম রোডে পথচারীদের জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করবে চেম্বার। এছাড়া বিত্তবান ও অগ্রসর শিল্প প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণে পুলিশকে সহযোগিতা দেবে চেম্বার।
জানতে চাইলে সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চেম্বারের সভাপতিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক এসেছিলেন। তাদের অনুরোধে দিনের বেলায় ভারি যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম, সেটা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এখন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ভারি যানবাহন সড়কে বের হতে পারবে। এছাড়া আমরা ৫০টা গাড়ির স্টিকার দেব। সেগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে দিনে বেরুতে পারবে।’
২০০৯ সালে সিএমপি সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীতে সব ধরনের ভারি ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল। তখন চেম্বার নেতারা পুলিশের এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেন। নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ব্যবসায়ীদের পক্ষে এবং সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পুলিশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
কিন্তু পুলিশ ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে দিনের বেলায় নগরীতে সীমিত পরিমাণ যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে দিনের বেলায় ভারি যানবাহন চলাচলের পরিমাণ আর সীমিত থাকেনি। অবাধে চলতে থাকে ভারি যানবাহন।
এই অবস্থায় গত ১৬ জানুয়ারি নগরীর কোতোয়ালী থানার মোড়ে কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান সরকারি সিটি কলেজের ছাত্রী সোমা বড়ুয়া। এই ঘটনার পর দিনের বেলা ভারি যানবাহন চলাচল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে সিএমপি আবারও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সামনে আনে এবং অভিযান শুরু করে।
এবারও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কুসুম দেওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাপ নয়, ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ