Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেভাবে এলো ভ্যালেন্টাইন’স ডে


১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:২২

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালবাসা দিবস। দিবস উদযাপনকারীরা তাদের প্রিয়জনদের উপহার দেন চকলেট, ফুলসহ নানাকিছু। সবকিছু হয় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামে। কিন্তু কে এই রহস্যময় সেইন্ট বা সাধু? তার নামে দিবসটি উদযাপনের এই প্রথা এলোই বা কিভাবে?

শতাব্দী পুরনো এই দিবস উদযাপন নিয়ে এখনও অনেকের মধ্যেই রয়েছে ভিন্নমত। প্রাচীন রোমান উদযাপন থেকে শুরু করে ইংল্যান্ড পর্যন্ত এই দিবসের ইতিহাসে রয়েছে অল্প-বিস্তর পার্থক্য।

সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন:

ভ্যালেন্টাইন’স ডে ও এর প্রবর্তক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের ইতিহাস দু’টোই রহস্যের জালে আটকে আছে। এখনও কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না যে কেন ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভালবাসার দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। এর শুরু নিয়ে তাই প্রচলিত রয়েছে একাধিক গল্প। কিন্তু কোনটির পক্ষেই প্রমাণ নেই। বর্তমানে যে ভ্যালেন্টাইন’স ডে উদযাপিত হয় এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খ্রিস্টান ধর্ম ও প্রাচীন রোমের ঐতিহ্য। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কে ছিলেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন? এই দিবসের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি?

রোমান ক্যাথলিক চার্চ ভ্যালেন্টাইন বা ভ্যালেন্টিনাস নামের তিন জন সেইন্টকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এদের প্রত্যেকেই হত্যা বা ফাঁসির শিকার হয়েছেন।

এক শ্রুতি অনুসারে, ভ্যালেন্টাইন তৃতীয় শতকে রোমে যাজক হিসেবে কাজ করতেন। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তার শাসনকালের এক পর্যায়ে এসে তিনি ঘোষণা দিলেন, তরুণরা বিয়ে করতে পারবে না। তার যুক্তি ছিল, বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিত পুরুষরা সেনা হিসেবে বেশি সক্ষম।

বিজ্ঞাপন

ক্লডিয়াসের এই ঘোষণা মেনে নেননি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি গোপনে তরুণ যুগলদের বিয়ে দিতে শুরু করেন। ক্লডিয়াসের কানে এই খবর পৌঁছে গেলে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন তিনি।

অন্য এক শ্রুতি অনুসারে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইনকে কারাদণ্ড দেন ক্লডিয়াস। সেখানে তার পরিচয় হয় এক কারারক্ষীর মেয়ের সঙ্গে। তার প্রেমে পড়েন সেইন্ট। মৃত্যুদণ্ডের দিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) তাকে একটি চিঠি লেখেন তিনি। চিঠির শেষে স্বাক্ষরের জায়গায় লিখেছিলেন- তোমার ভ্যালেন্টাইন।

আরেক গল্পে জানা যায়, রোমান কারাগার থেকে খ্রিস্টান বন্দিদের পালাতে সাহায্য করায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন সাধু ভ্যালেন্টাইন।

তাই কোনটি যে সাধু ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর আসল গল্প তা আজও রহস্য হয়েই আছে। তবে প্রতিটি গল্পেই তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে একজন সহানুভূতিসম্পন্ন, বীর ও রোমান্টিক মানুষ হিসেবে। মধ্যযুগে ভ্যালন্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ড পর্যন্ত। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে তিনি হয়ে ওঠেন সবচেয়ে জনপ্রিয় সেইন্টদের একজন।

শিক্ষাবিদদের ভাষ্য:

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদরা এসব শ্রুতির সঙ্গে একমত হতে নারাজ। ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ল্যাপল্যান্ডের ধর্ম শিক্ষা বিষয়ক অধ্যাপক ব্রুস ফোর্বস বলেন, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নিয়ে যে সব গল্পগুলো প্রচলিত আছে তার সবগুলোর মধ্যেই কিছু মিল আছে। হতে পারে যে, এগুলো একই ব্যক্তির ঘটনা, যেগুলো হয়তো শতাব্দীর আবর্তে লোকমুখে পাল্টে গেছে। যাই হোক, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে কোনো জোরদার প্রমাণ নেই।

শিক্ষাবিদদের মতে, প্রথম ভ্যালেন্টাইন’স ডে শুরু হয় চতুর্দশ শতাব্দীতে। সে সময় ইংরেজি কবি জিওফ্রে চসার তার এক কবিতায় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামটি ব্যবহার করেন।

বিজ্ঞাপন

চসার এক কবিতা ‘পার্লামেন্ট অব ফওলস’এ তিনি প্রথম লেখক হিসেবে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের উদ্ধৃত করেন। তার এই কবিতা প্রকাশের পর থেকেই ইউরোপজুড়ে ভ্যালেন্টাইন রোমান্সের প্রতীক হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে বহু লেখক তাদের লেখায় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নাম উল্লেখ করতে শুরু করেন।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে:

অনেকের বিশ্বাস, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর দিন বা দাফনের দিনকে স্মরণ করতেই ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভ্যালেন্টাইনের দিন হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টের জন্মের ২৭০ বছর পর মৃত্যু হয় ভালবাসার বার্তাবাহী এই সেইন্টের।

এদিকে, অনেকের দাবি, সম্ভবত, পাগান অনুষ্ঠান ‘লুপারস্যালিয়া’য় খ্রিস্টান ধর্মের আচার যুক্ত করতে চার্চের উদ্যোগেই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যের দিনটিতে ভ্যালেন্টাইনের দিবস হিসেবে উদযাপন শুরু হয়।

লুপারস্যালিয়া উদযাপিত হত ১৪ অথবা ১৫ ফেব্রুয়ারি। রোমানদের কৃষির দেবতা ফাওনুসকে উৎসর্গ করে উর্বরতার আশায় উদযাপিত হত উৎসবটি। এছাড়া রোমের প্রতিষ্ঠাতা রোমুলাস ও রেমুসকেও উৎসবটি উৎসর্গ করা হতো।

রোমান যাজকদের একটি শ্রেণি ছিল লুপারসি। এর শ্রেণির সদস্যরাই মূলত উৎসবটি উদযাপন করতেন। উৎসবের দিন তারা একটি পবিত্র গুহায় জড়ো হতেন। প্রচলিত আছে, ওই গুহায় রোমুলাস ও রেমুসের সদ্যজাত সন্তানের দেখাশোনা করেছিল এক ‘শি-উলফ’ বা লুপা।

উৎসবের জন্য উর্বরতার আশায় একটি ছাগলকে বলি দিতেন যাজকরা। আর শুদ্ধিকরণের জন্য বলি দেওয়া হতো একটি কুকুর। এরপর ছাগলটির চামড়া ফালি ফালি করে ছিলে ফেলা হতো। সেগুলোকে বলির রক্তে ভিজিয়ে নেওয়া হতো। ভিজিয়ে নেওয়া চামড়াগুলো দিয়ে নারীদের ও শস্য ক্ষেতগুলোতে মৃদুভাবে আঘাত করা হতো।

রোমান নারীরা এতে ভয় পেতেন না বরং চামড়ার এই আঘাত পেতে তারা বেশ উৎসাহীই ছিলেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, এতে তারা বেশি সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়ে উঠবেন।

শ্রুতি অনুসারে, পরবর্তীতে একই দিনে একটি বিশাল শবাধার বা কফিনে শহরের প্রত্যেক নারী তাদের নাম লিখে রাখতেন। শহরের অবিবাহিত তরুণরা সেখান থেকে একটি নাম পছন্দ করতো এবং পরবর্তী এক বছর তারা একসঙ্গে বাস করতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়াতো।

একটি রোমান্সের দিন:

খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব লুপারস্যালিয়ার ওপর তেমন একটা পড়েনি। কিন্তু পরবর্তীতে, পঞ্চম শতাব্দীর দিকে খ্রিষ্টান ধর্মীয় না হওয়ায় উৎসবটি বেআইনি ঘোষণা করা হয়। সে সময় পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’স ডে হিসেবে ঘোষণা দেন। এর কিছু সময় পরেই দিনটির সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে জড়িয়ে যায় ভালবাসা।

মধ্যযুগে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল যে, ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাখিদের বংশবৃদ্ধির মৌসুমের শুরু হয়। এই বিশ্বাস থেকে যুক্ত হয় যে, ভ্যালেন্টাইন ডে রোমান্সের দিন হিসেবে উদযাপিত হওয়া উচিৎ।

ভ্যালেন্টাইনে অভ্যর্থনা:

ভ্যালেন্টাইনে প্রিয়জনদের উপহার দেওয়া, অভ্যর্থনা জানানোর রীতি মধ্যযুগ থেকেই জনপ্রিয়তা পায়। তবে লিখিতভাবে ভ্যালেন্টাইনের বার্তা পাঠানো শুরু হয় ১৪০০ সালের পর।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরনো লিখিত ভ্যালেন্টাইন শুভেচ্ছার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ১৪১৫ সালে ইংল্যান্ডের অরলিনসের ডিউক চার্লসের লেখা একটি চিঠি। যুদ্ধ শেষে তিনি তখন ‘টাওয়ার অফ লন্ডনে’ বন্দি জীবন যাপন করছেন। সেখান থেকেই স্ত্রীকে লিখেছিলেন চিঠিটি। বর্তমানে সেই চিঠিটি লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত।

(হিস্টোরি নেটওয়ার্ক ও ওয়ারউইকডেইলিনিউজ অবলম্বনে)

সারাবাংলা/আরএ/এসএমএন

ভ্যালেনটাইন’স ডে সাধু ভ্যালেন্টাইন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর