সৌদির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাখ্যা চাইলেন দুই এমপি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:৪০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
সংসদ ভবন থেকে: সৗদি আরবের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে (১৪ ফেব্রুয়ারি) একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টি সংবিধানের ২৫ বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন দুই জন সংসদ সদস্য। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তার বক্তব্য সমর্থন করে কথা বলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।
স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেনন বলেন, ‘আমি সংবিধানে ২৫ বিধির প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ’ বিবিসি’র সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মেনন বলেন, ‘গত পরশু বিবিসির সংবাদে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা বলা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, চুক্তিস্বাক্ষর সম্পন্ন পর্যায়ে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশের ১ হাজার ৮০০ সেনা নিয়োগ দেওয়ার কথা। সৌদি আরবে ইসলামী সেনাবাহিনী কাউন্টার টেরোরিজম কমিশন (আইএমসিটিসি) বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ ৪ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেওয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ হয়েছে।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘২০১৫ সালে যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ নাম লিখেছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম, আমাদের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি। সেই সময় সৌদি আরব যখন বিষয়িটিকে ৩৪ জাতি সামরিক জোন বলেছিল, তখন খটকা ছিল। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইনিয়ে-বিনিয়ে তখন বলেছিল, এটি একটি সন্ত্রাসবিরোধী সন্মিলিত উদ্যোগ। সেই সময় জনগণের আশঙ্কাকে নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, সৌদি আরবে যে দুটি মসজিদ রয়েছে, মক্কা ও মদিনায় হেরেম শরিফ—এই মসজিদ দুটি যদি আক্রমণের মুখে পড়ে, তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে। এর বাইরে কখনো কোনো সেনাবাহিনী পাঠাবে না। আমরা আশস্ত হয়েছিলাম কিন্তু এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। কিন্তু আমরা জেনেছি, এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন পর্যায়ে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না? সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সংবিধানে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এই দুই দিক দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। প্রথমটি হচ্ছে সেনাবহিনী মোতায়েন। এটা জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গিতপূর্ণ কি না? দ্বিতীয়ত, আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশ উপস্থিতিতে আমাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি কী হবে?’
আরও পড়ুন: সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান পাটমন্ত্রীর
মেনন বলেন, ‘আমরা জানি, ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্ব ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে সেখানে প্রতিমুহূর্তে আক্রমণ চালাচ্ছে বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য। আমরা জানি, আরব দেশের বসন্তের তার বিকৃত প্রয়োগ ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কী ধরনের পরিণতি সৃষ্টি করেছিল, সৌদি আরব সেখানে কী সুবিধা নিতে যাচ্ছে। জাতসংঘের মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন, ইয়েমেনের ঘটনা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে সীমান্তে মাইন অপসারণ করবে, আমাদের সেনাবাহিনী একদিন ইরাকি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কুয়েতে মাইন অপসারণ করে সুনাম অর্জন করেছিল, তারা কেন মাইন অপসারণের নামে নিজেদের জীবন দেবে? যেটা সংবিধান অনুমোদন করে না।’
স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেনন আরও বলেন, ‘শুধু তাই নয়, যখন ইয়েমেন সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনী থাকবে, খুব স্বভাবিকভাবেই একটি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক এখানে সৃষ্টি হবে। সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা হয়ে, কোনো বিরোধপূর্ণ ঘটনায় আমাদের সেনাবাহিনী সেখানে অংশ নেবে না। আমরা এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বিবৃতি পাইনি। তাই আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দাবি করছি। পাশাপাশি বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না আপনার (স্পিকার) কাছ থেকেও রুলিং আশা করছি।’
এদিকে, ফখরুল ইমাম বলেন, ‘সংসদ রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক অঙ্গ। সংবিধানের ১৪৫ (ক) বলা আছে, কোনো বৈদেশিক চুক্তি হলে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন। রাষ্ট্রপতি সেটা সংসদে দেবেন। এটা আলোচনা করলে কী অসুবিধা ছিল? আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকালও এখানে ছিলেন, তিনি জানতেন এই চুক্তিটা হবে। তিনি আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করেন কি না, এটা আমার প্রশ্ন।’
ফখরুল ইমাম আরও বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে, সংসদকে পাশ কাটিয়ে আজকে যদি সেশন না থাকতো তাহলে বুঝতাম যে, পার্লামেন্টকে অবজ্ঞা করেননি। আমার মনে হচ্ছে সংসদকে অবজ্ঞা করে, পাশ কাটিয়ে, মূলহীন ভেবে এই জিনিসিগুলো করা হয়েছে। এটা সরকারের জন্য কতটুক যুক্তিযুক্ত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা টিফা চুক্তিও দেখেছি, কোনো চুক্তি আপনার (স্পিকারের) দফতরে জমা পড়েছে কি না, জানি না। ২৫ বছরের চুক্তিও আছে কি না আমি জানি না। ’ এই সংসদের মান-মর্যাদা ও গণতন্ত্রের মূল্যয়নের জন্য বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমএনএইচ