চুয়াডাঙ্গায় নদী পুনঃখনন: পাউবো’র টাকা আছে, লোক নেই
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:০০
।। রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
চুয়াডাঙ্গা: পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলার ৫টি নদী ও ২টি খাল পুনঃখননের কাজ জনবল সংকটে ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিললেও তা কোনো কাজে আসছে না, বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা পনি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জনবল সংকট দূর করার জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। নদীখনন কাজ তদারকি ও বুঝে নেওয়ার জন্য জনবল সংকট রয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মেহেরপুর জেলাও রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ৬৯ জনের মধ্যে এখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৯ জন, শুন্য রয়েছে ৪৩টি পদ।
শূন্য পদগুলো হলো— উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ১ জন, সহকারী প্রকৌশলী (রাজস্ব) ১ জন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা ৩ জন, সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১ জন, সহকারী সেচ কর্মকর্তা ১ জন, উচ্চমান সহকারী প্রধান করণীক ১ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ৩ জন, সার্ভেয়ার (রাজস্ব) ১ জন, সার্ভেয়ার (প্রকৌশলী) ২ জন, ট্রেসার ১ জন, কার্যসহকারী ৬ জন, হিসাব করণীক ১ জন, গাড়িচালক ৩ জন, ইলেট্রেশিয়ান ১ জন, পাম্প অপারেটর ১ জন, অফিস সহায়ক ৯ জন, মালী ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ৩ জন ও সহকারী কুক ১ জন।
জেলার পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানান, জেলার মধ্যে থাকা খাল, ছোট নদী এবং জলাশয়ে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য পুনঃখননের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কৃষি কাজে পানি ব্যবহার ও সুযোগ মতো মাছচাষে ২০ জানুয়ারি থেকে কাজ পুরোদমে শুরু হয়। কিন্তু দ্রুত জনবল সংকট দূর না হলে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দুস্কর হবে। ভেস্তে যাবে সরকারের মহৎ এই উদ্যোগ।
জাহেদুল ইসলাম আরও জানান, জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১৪ কিলোমিটার নবগঙ্গা নদী, ২৫ কিলোমিটার চিত্রা নদী, ১২ কিলোমিটার কুমার নদী ও ৬ কিলোমিটার নৌকা খাল এবং চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মেহেরপুর জেলার ৮ কিলোমিটার ছেউটিয়া নদী, ৮ কিলোমিটার কাজলা নদী, মুজিবনগর উপজেলায় সরস্বতী খাল ১০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ কাজ বাস্তবায়নে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। জনবল সংকট দূর হলে ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন করা হচ্ছে জেনে খুশি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের কৃষক ইলিয়াস হোসেন (৫৫)। তিনি বলেন, ‘আগে চিত্রা নদীর পানি ব্যবহার করেই আমাদের কৃষি কাজ চলতো। চিত্রা নদীর উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর তাতে পানি থাকে না।’
উপজেলার দোস্ত গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান কাজলও বলেন, ‘এই গ্রাম দিয়ে চিত্রা বয়ে গেলেও সেখানে পানি নেই। নদী খনন হলে এখানকার মানুষ কৃষিতে আরও সমৃদ্ধ হবে।’
চুয়াডাঙ্গার সদরের পৌর এলাকার শ্মশানপাড়ার কৃষক কুদ্দুস মন্ডল (৭০) বলেন, ‘আমার আবাদী জমির পাশ দিয়ে নবগঙ্গা খাল প্রবাহিত হলেও সেখানে পানি না থাকায় সেচ সুবিধা পাওয়া যায় না। নবগঙ্গা খাল খনন হলে কৃষি কাজে বেশ উপকার হবে, পানির সমস্যায় থাকতে হবে না।’
সারাবাংলা/এমও