Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশুসহ ৪টি ওয়ার্ড অনুপযোগী, সোহরাওয়ার্দীতে বাকি কার্যক্রম চলছে


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:০১

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ফের চলছে চিকিৎসাসেবা (ছবি: সুমিত আহমেদ)

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনায় চারটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যাওয়ার ব্যবহারের উপযোগী নেই। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডও রয়েছে। ফলে হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর হওয়া শিশুদের ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ বাকি ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চলছে। হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর হওয়া প্রায় ১১শ রোগী মধ্যে তিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে ফিরে এসেছেন। এদিকে, এরই মধ্যে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

বিজ্ঞাপন

সেবায় ফিরেছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল

শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে টেবিল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন চিকিৎসকসহ নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হাসপাতাল থেকে বৃহস্পতিবার রাতে যেসব রোগীকে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তারা ফিরে আসতে থাকলে তাদের রিসিভ করা হচ্ছে এই ডেস্ক থেকে। রোগীদের নাম-ঠিকানা তথ্য নিয়ে তাদের এখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিজ নিজ ওয়ার্ডে।

স্থানান্তর হওয়া রোগীরা ফিরছেন

বহির্বিভাগের সামনের এই ডেস্কে কাজ করছিলেন ডা. মোস্তফা কামাল রউফ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শতভাগ প্রস্তুত। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই হাসপাতালের সবাই মিলে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে অনেক রোগী আসতে শুরু করেছেন। বাকি রোগীদের প্রতিও আমরা বলব, এখানে চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক করতে আমরা কাজ করছি। আপনারা ফিরে আসতে পারেন।’ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্তই ৩২২ জন রোগী হাসপাতালে ফিরে এসেছেন বলে জানান এই চিকিৎসক।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগুন লাগার ফলে হাসপাতালের চারটি বিভাগ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এই চারটি ওয়ার্ড ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ওয়ার্ড চারটি হলো— শিশু ওয়ার্ড, নারীদের একটি সার্জারি ওয়ার্ড, নারীদেরিএকটি মেডিসিন ওয়ার্ড ও একটি কেবিন ওয়ার্ড। বাকি ওয়ার্ডগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়লেও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ফিরে এসে যে যার বেডে

এদিকে, নারীদের সার্জারি ও মেডিসিন ওয়ার্ড দুইটি করে থাকায় একটি ওয়ার্ডের রোগীদের সংশ্লিষ্ট অন্য ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে শিশুদের ওয়ার্ড একটিই থাকার কারণে তাদের হাসপাতালে ফিরিয়ে এনে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একশ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা শিশুদের কেউ কেউ ফিরে এলেও তাদের রিসিভ করছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কিছু কিছু ওয়ার্ডে পানি জমে আছে। তা পরিষ্কারে কাজ চলছে

হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক বলেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা রোগীদের পাশের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) স্থানান্তর করা হয়েছিল। তাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসিইউতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ফিরছেন রোগীরা। তাদের গ্রহণ করতে বহির্বিভাগে রয়েছেন চিকিৎসরা

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে তদন্ত কমিটি। হাসপাতাল পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়ার নেতৃত্বে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে এই কমিটি কাজ শুরু করেছে। তবে তাদের কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, মাত্র কাজ শুরু করেছি। তদন্তে কোনো তথ্য বেরিয়ে এলে তা গণমাধ্যমকে জানাব।

পুড়ে গেছে রোগীদের বেডসহ সবকিছু

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, তৃতীয় তলার স্টোর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় ও নিচ তলায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুনে হাসপাতালটির ১০ থেকে ১২টি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপিরচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহমেদ জানান, ওষুধ, রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ থাকায় সহজেই আগুন এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আগুনে কাঁচ ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে।

হাসপাতালের পুড়ে যাওয়া একটি অংশ

হাসপাতালে আগুন লাগার পর হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব। রাতেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাসপাতালের প্রায় ১১শ রোগীকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আগুন লাগার পরপরই আশপাশে থাকা সরকারি-বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসকে ডাকা হয় সাহায্যের জন্য। কোনো আর্থিক সহায়তা না দিতে পারলেও তারা স্বেচ্ছায় এসে মানবতার সেবাতে কাজ করেছেন। এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ জানান তিনি।

এদিকে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার উত্তম কুমারকে প্রধান করে সাত সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

ছবি: সুমিত আহমেদ

আরও পড়ুন-

হাসপাতালে আগুনের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি

আগুন নিয়ন্ত্রণে, রাতেই চালু হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল

স্টোর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত, ধারণা ফায়ার সার্ভিসের

সোহরাওয়ার্দীতে ‘স্বাভাবিক’ কার্যক্রম শুরু, ফিরছেন রোগীরা

‘এক হাজার রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে’

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনেরা

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ১৪ ইউনিট

সোহরাওয়ার্দীতে আগুন, ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী স্থানান্তর

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর