ব্রেক্সিটের ফাঁদ থেকে বের হতে পারবেন মে?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৫০
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে আবারও পরাজয়ের শিকার হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে ব্রেক্সিট আলোচনা নিয়ে তার প্রস্তাব ব্যাপক ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। এই পরাজয়ের জন্য বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনকে দুষেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। খবর বিবিসির।
ব্রেক্সিট নিয়ে সরকারের চলমান কৌশলের ওপর বৃহস্পতিবার বিতর্ক ও ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। এতে সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৫৮ সাংসদ ও বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩০৩ জন।
অবশ্য এই পরাজয়ে আইনি কোং বাঁধার সম্মুখীন হবে না মে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, এতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে মে’র আলোচনায় কোং পরিবর্তন আসবে না।
কিন্তু করবিন ভোটের পর বলেছেন, মে’র উচিৎ এটা স্বীকার করে নেওয়া যে, সরকারের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি, পার্লামেন্টে সমর্থিত হবে এমন একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
টরি বিদ্রোহ:
ভোটের আগেই ব্রেক্সিট সমর্থনকারী প্রভাবশালী টরি সাংসদদের দল ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি) ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ভোট দেবে না। এর পেছনে তাদের যুক্তি ছিল, সরকারের পক্ষে ভোট দিলে সেটা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের পক্ষে সমর্থন জানানো হবে।
মে পূর্বে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা বাতিল করার বহু আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইআরজি’র দাবি, বৃহস্পতিবারের ভোটে সরকার জয়ী হলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পেত। যদিও গত মাসে এক ভোটে সাংসদরা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা বাতিল করে দেওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিকে, গতকালের ভোটে ক্ষমতাসীন টরি দলে বিদ্রোহের নজির কেবল ইআরজি’র মধ্যেই দেখা যায়নি। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন আরও অনেক কট্টরপন্থী ব্রেক্সিট সমর্থক। সব মিলিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির এক-পঞ্চমাংশের বেশি সদস্য সরকারকে সমর্থন জানায়নি।
এমনকি পাঁচ জন কনজারভেটিভ সাংসদ- পিটার বোন, স্যার ক্রিস্টোফার চোপে, ফিলিপ হলোবোন, আনে ম্যারি মরিস ও সারাহ ওলাস্টোন বিরোধী দল লেবার পার্টির পক্ষে ভোট দিয়েছে। এদের মধ্যে সারাহ ওলাস্টোন ব্যতিত সকলেই ব্রেক্সিট সমর্থনকারী।
পরাজয়ের জন্য দায়ী করবিন:
ভোটে পরাজিত হওয়ার জন্য জেরেমি করবিনকে দায়ী করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বলেছে, সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়ে করবিন আরও একবার জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে একপাক্ষিক বিবেচনার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র জানান, পরাজিত হয়েও আইনী বাধ্যবাধকতা মেনে ব্রেক্সিট চুক্তি থেকে বিতর্কিত আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা বাতিল করতে কাজ করে যাবেন মে। কেননা ২৯ জানুয়ারির ভোটে হাউজ অব কমন্সে সাংসদরা তাকে এমনটা করতেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
মুখপাত্র বলেন, আমরা হাউজ অব কমন্সে সমর্থন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস ও অনুষ্ঠিত বিতর্ক থেকে এটা প্রমাণিত যে, কয়েকজন কনজারভেটিভ সহকর্মী বিদ্যমান চুক্তিতে ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা পরিবর্তন করার চেয়ে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা বাতিল করতে বেশি জোর দিয়েছেন।
গ্যাঁড়াকলে মে:
বৃহস্পতিবারের পরাজয়ে মে’কে কোন আইনি বাধ্যবাধকতা মানতে হবে না। তবে এই পরাজয় তার জন্য তাকে চরম দাম দিতে হতে পারে।
গত ২৯ জানুয়ারি হাউজ অব কমন্সে এক ভোটে সরকারের ব্রেক্সিট চুক্তি সংশোধনের পক্ষে ভোট দেন সাংসদরা। বিদ্যমান চুক্তি থেকে ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা সরিয়ে নিতে বলা হয় সংশোধনীতে।
ইইউ অবশ্য আগেই জানিয়েছিল যে, তারা চুক্তিতে কোন পরিবর্তন আনবে না। তবে মে তখন দাবি করেন, তিনি এ বিষয়ে ইইউ’র সঙ্গে আলোচনায় বসতে ও পরিবর্তন আনতে পারবেন তিনি। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
এমতাবস্থায়, বৃহস্পতিবারের ভোট ছিল ইইউ’র কাছে মে’র অগ্নিপরীক্ষার মতো। আলোচনার জন্য তার প্রতি দলের সমর্থন প্রমাণ করা যখন তার জন্য অত্যাবশ্যক, তখনই আবারও পরাজয়ের মুখ দেখলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবারের পরাজয় নিয়ে জেরেমি করবিন বলেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টকে বলেছিলেন, তার নতুন কৌশল পার্লামেন্টে একটি নিরাপদ, বাস্তব ও নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হবে। কিন্তু আজকের ভোটে তা প্রমাণ হল যে, প্রধানমন্ত্রীর কৌশলের প্রতি এই পার্লামেন্টে কোন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
তিনি বলেন, এমনটা চলতে পারে না। এই সরকার পার্লামেন্টকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ২৯ মার্চের দিকে এগিয়ে যেতে পারি না।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৯ মার্চ কার্যকর হত চলেছে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া। এর আগে নতুন কোন চুক্তিতে না সম্মত অতে পারলে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে যুক্তরাজ্যকে। এতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে লাখ লাখ মানুষ ও মে সরকার। এমতাবস্থায় অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে- এই গ্যাঁড়াকল থেকে বের হতে পারবেন টেরিজা মে?
সারাবাংলা/ আরএ