ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:১৪
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙনরোধ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে চিলমারী বন্দর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৩০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেওয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীরে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলা অবস্থিত। এই এলাকাকে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে রক্ষার্থে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল মেয়াদে কুড়িগ্রাম বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প এলাকায় শহর রক্ষা প্রকল্প এবং ইমারজেন্সি ডিজাস্টার ড্যামেজ রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্টের আওতায় বিভিন্ন সময়ে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ, ক্রসবার স্পার নির্মাণ করা হয়। বাস্তবায়িত এই প্রকল্পগুলোর আওতায় ১১৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ১৭টি রেগুলেটর, ৫ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ, ২টি গ্রোয়েন, একটি স্পার ও ১৩টি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বন্যামুক্ত এলাকা রয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার ১৮৪ হেক্টর।
প্রকল্প এলাকায় ১১৪ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধরলা নদীর ডান তীর, ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর এবং তিস্তা নদীর বাম তীর দিয়ে প্রবাহিত ও লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম রেললাইন দিয়ে পরিবেষ্টিত। বাঁধের অভ্যন্তরে কুড়িগ্রাম শহর, রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা শহর এবং উলিপুর-তিস্তা ৫০ কিলোমিটার রেললাইন, প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৮০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও চিলমারী বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ধরলা, তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৮টি স্থানে প্রায় ১২ দশমিক ৭শ’ কিলোমিটার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এই এলাকার বিভিন্ন স্থাপনাগুলো ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য ২০০৬ সালে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) সমীক্ষা করা হয়।
ওই সমীক্ষায় ৩টি পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। তারপর প্রথম পর্যায়ে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬ দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ ও একটি ক্রসবার পুনর্বাসন করা হয়। এছাড়া আইডব্লিউএম সুপারিশ করা ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলো স্থায়ীভাবে রক্ষা করার জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। আইডব্লিউএম এর সমীক্ষা ও বাপাউবো গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৪ হাজার ৮শ’ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ৫২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ এবং ২টি আরসিসি ঘাট নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার অনন্তপুর এলাকার নয়ারদারা এবং চিরমারী উপজেলার ফকিরেরহাট, জোড়গাছ, চিলমারী বন্দর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন হতে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/এসএস/এটি