Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিলায় ভরে গেল উঠান-রাস্তা-মাঠ, ফসলের ক্ষতির শঙ্কা


১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:০৫

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

রাজশাহী: রাজশাহীর বেশকিছু এলাকার মানুষের রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘুম ভেঙেছে প্রবল ঝড়ে। সঙ্গে ছিল ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী শিলাবৃষ্টিতে জেলার গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা এলাকায় তৈরী হয় শিলার স্তুপ।

স্থানীয়রা বলছেন, গত ৫০ বছরে এই পরিমাণ শিলা পড়তে দেখেননি তারা।

এদিকে শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব এলাকার আমের মুকুলসহ ফসলের মাঠ। ঝরে পরেছে প্রচুর পরিমাণে আমের মুকুল। ফলে এবছর আম বাগানের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

ভোরে শুরু হওয়া শিলাবৃষ্টির কারণে বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমিতে শিলার স্তপ তৈরি হয়। যা ছিল সকাল পর্যন্ত। সেইসঙ্গে ছিল কনকনে ঠাণ্ডা। বিশেষ করে পুঠিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টির কারণে বরফের স্তুপ হয়ে যায়।

পুঠিয়ার ধোপাপাড়া ও আগলা এলাকার ষাটোর্ধ বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ভোরে যে পরিমাণ শিলা বৃষ্টি হয়েছে তা তিনি এর আগে কখনও দেখেননি। ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখেন শিলা পড়ে চারদিক সাদা হয়ে আছে।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, ভোরে ৩৮ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তারা ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন। আর বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হয়েছে। তবে সে সময় ঝড়ো হাওয়া ছিল না।

এদিকে আম ব্যবসায়ীরা বলছেন মুকুল ঝরে যাবার কারণে এ বছর বাগানের দাম বেড়ে যাবে। বাগানগুলো সাধারনত আম পাকা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার হাত বদল হয়। এবারও তেমনি হবে। কিন্ত ব্যবসায়ীদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে বাগান কেনার জন্য। এতে করে এই মৌসুমে আমের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এবার আমের গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু ভোরে শিলাবৃষ্টির আঘাতে প্রচুর মুকুল ঝরেও পড়েছে। এতে লোকসান গুণতে হবে।

গোদাগাড়ীর পেয়াজ চাষি শামসুর রহমান জানান, শিলা বৃষ্টি হবার কারনে তার পেয়াজের ফলন নষ্ট হয়েছে। জমিতে শিল জমেছিল তা অপসারন করা হয়েছে দ্রুতই। তবে উৎপাদন নিয়ে তিনি শঙ্কিত।

রাজশাহী মহানগরীর আম ব্যবসায়ী সুমন আলী বলেন, এই শিলাবৃষ্টির কারনে অনেক বাগানের মুকুল ঝওে পড়েছে। তাই এ বছর বাগানের দাম বাড়বে। বিশেষ করে এক লাখ টাকার বাগান কিনতে হবে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে।

তবে ফল গবেষকরা বলছেন, মুকুল ঝরে পড়লেও চাষিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। এ বছর আমের উৎপাদন স্বাভাবিকই হবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম বলছেন, আমের মুকুল ঝরে পড়লেও চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, আম হলো বৈরি আবহাওয়ার ফসল। ঝড়, বৃষ্টির মধ্যেই আমের উৎপাদন হয়ে থাকে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এবার আমের উৎপাদন ভালো হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে বলেও জানান তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে শেষ পর্যন্ত সেই পরিমাণ আম ধরে না। আবার ধরলেও গাছে থাকে না। ঝরে পড়ে। এবার শিলার কারণে অনেক মুকুল ঝরলেও বৃষ্টি গাছের মুকুলগুলোর জন্য ভালো হয়েছে। তাই আমের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যাবে বলেই মনে করেন তিনি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, শিলা এবং ভারি বৃষ্টি কারণে পেঁয়াজ, রসুন, গম ও আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে তারা জরিপ শুরু করেছেন।

সারাবাংলা/এসএমএন

আমের মুকুল ফসলের ক্ষতি রাজশাহী শিলাবৃষ্টি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর