বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না, তদন্তের নির্দেশ নওফেলের
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:০০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাইয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে নাশকতা আছে কি-না খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মানুষগুলো নাশকতার শিকার কি-না, তারও সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন ওই এলাকার সংসদ সদস্য নওফেল।
সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর চাক্তাই বেড়া মার্কেট এলাকায় আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে উপমন্ত্রী এসব নির্দেশনার কথা জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘ইতোমধ্যে নাশকতার অভিযোগ এসেছে। যেহেতু অভিযোগ এসেছে, বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এখানে মারা গেছেন, তারা নাশকতার শিকার হয়েছেন কি-না সেটি আমরা জানতে চাই।’
নওফেল বলেন, ‘আমরা শুনেছি, এখানে (বস্তিতে) বেশকিছু ব্যক্তিবর্গ ভয়ভীতি দেখিয়ে নাকি কিছু মানুষকে আটকে রেখেছিল। অভিযোগ এসেছে, কতটুকু সত্য আমরা জানি না। সত্যতা না জেনে মন্তব্য করতে চাই না। তবে কেউ যদি এখানকার অসহায় মানুষদের মাধ্যমে কোনো পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের ব্যবহার করে, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে চলমান অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমের প্রসঙ্গও আনেন উপমন্ত্রী নওফেল।
তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ন্যায্যভাবেই নদীর তীর থেকে উচ্ছেদটা শুরু হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে কোনো ঘটনা ঘটেছে কি-না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে অবশ্যই। সেখানে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। কিসের ভিত্তিতে কারা উচ্ছেদ হবে, উচ্ছেদের সঙ্গে পুর্নবাসনের বিষয়টাও জড়িত, আবার উচ্ছেদ কেন করা হবে যদি মালিকানা থাকে, এসব বিষয় নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে। তাই প্রথম থেকেই বলেছি, হাঁটুঝারা প্রতিক্রিয়া যেন দেওয়া না হয়। হাঁটুঝারা প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।’
‘আমরা চাই- সুষ্ঠু তদন্ত হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বলেছেন- সরকারের যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সাধারণ, অসহায় মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। নির্বাচন মাত্র শেষ হয়েছে। এই সাধারণ মানুষরাই কিন্তু তাদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রায় দিয়েছেন। সুতরাং তারা যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
নওফেল বলেন- তাদের ব্যবহার করে কোনো অশুভ শক্তি যেন পেছন থেকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি না করে, সেটাও দেখতে হবে। তাই প্রশাসনকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে। এজন্য আমরা চাই, যে ঘটনা ঘটেছে- এটার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং পরিস্কার একটা চিত্র বেরিয়ে আসুক।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তির জমির মালিকানার বিষয়েও তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপমন্ত্রী নওফেল।
তিনি বলেন, ‘এখানে (বস্তি) তো অসহায় মানুষেরাই আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের স্থায়ী ঠিকানা, অস্থায়ী অবস্থান এগুলো নিরূপণ করতে হবে। তার চাইতেও বড় কথা হচ্ছে- এখানকার জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে নানা আলোচনা আমরা ইতোমধ্যে শুনতে পাচ্ছি। জেলা প্রশাসনকে বলেছি- ঘটনার পেছনের ঘটনা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।’
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের একটা তালিকা করে পুর্নবাসন এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা মারা গেছেন, তাদের জন্য তো আর কোনোভাবেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে নির্দেশ দিয়েছি, ঘটনা কি হয়েছে সেটা যেন খতিয়ে দেখা হয় এবং তদন্ত করা হয়।’
রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার চাক্তাই বেড়া মার্কেট এলাকায় একটি বস্তিতে আগুনে পুড়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়। বস্তির দুই শতাধিক ঘরও আগুনে পুড়ে গেছে।
কর্ণফুলী নদী এবং রাজাখালী খালের মোহনায় গড়ে ওঠা চর (সরকারি খাসজিম) দখল করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা এই বস্তি বানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরুর পর মৌখিকভাবে বস্তিবাসীদের সেখান থেকে সরে যাবার জন্য বলেছিল প্রশাসন। তবে অগ্নিকাণ্ডের পর বস্তিবাসীর অভিযোগ- দখলদারদের বাধায় তারা বস্তি ছাড়তে পারেননি।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই