Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাইবান্ধায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ


১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩৭

।। শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: গত একবছর ধরে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানায় চলছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সপ্তম পর্বের কার্যক্রম। এই কর্মসূচির মাধ্যমে পলাশবাড়ী উপজেলায় তিন হাজার ১৪ জনকে দুই বছর মেয়াদি অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে সরকার। তবে কর্মসংস্থান হওয়ার আগে সবাইকে তিন মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। কিন্তু প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে না করিয়ে কর্মসূচির কয়েক কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অভিযোগের তীর গাইবান্ধা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক তোফায়েল আহমেদ ও তার সহযোগীদের দিকে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনে এমন একটি অভিযোগ জমা পড়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, পলাশবাড়ী থানায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের সুবিধাভোগী মোট ৩ হাজার ১৪ জনকে তিনটি ভাগে ভাগ করে তিন মাস করে পর্যায়ক্রমে গত ৯ মাস ট্রেনিং কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচে ছিলেন এক হাজার জন করে। আর তৃতীয় ব্যাচে ছিলেন একহাজার ১৪ জন। প্রতিটি ব্যাচের একশ জন করে একটি রুমে বসিয়ে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। প্রতিটি প্রশিক্ষণে ৩ ঘণ্টার চারটি করে ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও মানা হয়নি সে নিয়ম। গত ৯ মাসে হাতেগোনা দুয়েকটি প্রশিক্ষণ ক্লাস নেওয়া হয়েছে। অথচ প্রতিটি ক্লাসের জন্য প্রশিক্ষকের বিল ছিল ৪৫০ টাকা।

শুধু তাই নয়, প্রতিদিন ১০টি রুমে ৪০টি ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও সাকুল্যে ১২ থেকে ১৫টি করে ক্লাস হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু বাকি ক্লাসের টাকাগুলো কর্মকর্তারা মিথ্যা ও ভুয়া সাইন দিয়ে ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছেন। তবে প্রতিদিন ২০টি করে ক্লাস হয়েছে ধরলেও বাকি ক্লাসগুলোর প্রশিক্ষক বিল দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এমনকি টাকা চুরি করতে তারা ক্লাস ট্রেনারও নিয়ে আসতেন না।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রেনিংয়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য যাতায়াতের জন্য ১০০ টাকা করে বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে তিন মাসে প্রশিক্ষণের কর্মদিবস হিসাব করা হয়েছে ৭৪ দিন। সে হিসাবে প্রতিজনের নামে ৭ হাজার ৪০০ টাকার চেক ইস্যু করেন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তারা। তবে কেউ দু’দিন অনুপস্থিত থাকলেও তার যাতায়াত ভাড়া ৫০০ টাকা এবং ৫ বা ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তার কাছ থেকে এক হাজার বা দুই হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থী যে কর্মকর্তার অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তার নামে দিতে বলা হয়েছে এই টাকা।

জানা গেছে, এর আগে দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের যাতায়াত ভাতাও দেওয়া হয়েছিল ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে। তবে সেবারেও প্রশিক্ষণার্থীদের অনুপস্থিতির জন্য কয়েকগুণ করে টাকা জমা দিতে বাধ্য করা হয়। এভাবে কেবল প্রশিক্ষণার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়েই তিন হাজার ১৪ প্রশিক্ষণার্থীর একেকজনের কাছে ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ করেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। সে হিসাবে কেবল এই খাত থেকেই ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে প্রশিক্ষকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষক নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও জালিয়াতি করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনেই প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নেওয়া রবিউল ইসলামকে দিয়ে পরের ব্যাচগুলোতে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। এভাবে প্রশিক্ষক না দিয়েই প্রকল্পের প্রশিক্ষণ অংশের টাকা-পয়সা লোপাট করা হয়েছে।

জানা গেছে, পলাশবাড়ী উপজেলায় গত একবছর ধরে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নেই। অস্থায়ীভাবে অন্য এলাকায় কর্মরত একজনকে দিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। আর এখানে গাইবান্ধা জেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তোফায়েল আহমেদ খান। তার অধীনে রয়েছেন সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল হক (স্বপ্নন), হামিদুল ইসলাম ও ফজলুল করিম; কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল সেলিম এবং ক্যাশিয়ার মো. মোস্তাকিন মিরান মুন্না।

দুদকের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, উপপরিচালক তোফায়েল খান ও এই সহকারী কর্মকর্তারা মিলে এভাবে গত ৯ মাসে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কেবল পলাশবাড়ী নয়, গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর, ফুলছড়ির মতো স্থানেওে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পগুলোতে একইভাবে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন জেলার উপপরিচালক তোফায়েল আহমেদ ও তার সহযোগীরা।

এ বিষয়ে সারাবাংলার পক্ষ থেকে উপপরিচালক মো. তোফায়েল আহমদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পলাশবাড়ীতে প্রশিক্ষণের কোনো দুর্নীতি হচ্ছে না কিংবা হয়নি।’ এ বিষয়ে জমা হওয়া অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভড করেননি।

জানতে চাইলে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের প্রধান মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, অভিযোগটি সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। তবে অভিযোগ এসেছে, সেটি যাচাই-বাছাই করা হবে। যাচাই-বাছাই শেষে বলা যাবে এটা নিয়ে কী করা হবে।

সারাবাংলা/এসজে/জেএএম/টিআর

দুদকে অভিযোগ দুর্নীতি প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর