‘শাজাহান খানকে প্রধান করে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ’
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২৩:৪১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সাব্কে নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটিকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতিকে প্রধান করে এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিদের এই কমিটিতে রাখায় নিন্দা ও প্রতিবাদও জানিয়েছে সংস্থাটি।
টিআইবি বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় লিপ্ত ব্যক্তিদের, বিশেষ করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একচ্ছত্র প্রাধান্য থাকায় স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এই কমিটি গঠন প্রশ্নবিদ্ধ। তাই এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের প্রধান করে স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন- সংসদে কৈফিয়তেও শ্রমিকদের পক্ষ নিলেন শাজাহান খান
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগই যখন দেখা যাচ্ছে না, তখন অবশেষে যেভাবে কমিটি গঠিত হলো— তা সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কমিটির প্রধান ও সদস্য হিসেবে এর আগে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা, পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও একচোখাভাবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রভাবশালীদের রাখা হয়েছে। ফলে এ কমিটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে— এমন আশা করা অসম্ভব।
উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রীর বিতর্কিত ভূমিকা ও প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের পরও শ্রমিকদের অনায্য দাবির পক্ষে তার এবং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত একাধিক সদস্যের প্রত্যক্ষ অবস্থান তাদের নিরপেক্ষতা ও দুর্ঘটনা কার্যকর নিয়ন্ত্রণের স্বদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই— প্রধানমন্ত্রী ‘সবক্ষেত্রে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা’র যে ঘোষণা দিয়েছেন, এই কমিটি গঠন তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আরও পড়ুন- ‘শাজাহান খানের বিরোধিতা কেউ করেননি’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার ওপর টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, সড়ক পরিবহন খাতে সীমাহীন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, বিচারহীনতা, দায়িত্বে অবহেলা ও প্রভাবশালীদের লাগামহীন অসাধু দৌরাত্ম্য বিদ্যমান। প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে সড়কজুড়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া যান চালনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পরিবহন খাত কমিটি প্রভাবশালী শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তার সাংবিধানিক অঙ্গীকার নির্বিকারভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিটি আদতে কোনো কার্যকরী ফল আনবে না। সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান— অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ব্যক্তি, বিশেষ করে এ খাতে খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ, নাগরিক অধিকার ক্ষেত্রের অংশীজন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতাদের সমন্বয়ে এই কমিটি পুনর্গঠন করা হোক।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কোনো ধারা আরও শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী ও জনস্বার্থ পরিপন্থি।
সারাবাংলা/জিএস/জেএ/টিআর
টিআইবি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) শাজাহান খান সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত কমিটি