Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জীবন দিয়ে হলেও ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করতে চান জাকিয়া নুর


২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৬

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

সংসদ ভবন থেকে: পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এরপর বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাদের পথ ধরেই সংসদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর। সংসদে প্রথম বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু-বাবা-ভাই এর স্মরণ করে আপ্লুত হয়ে যান কিশোরগঞ্জের এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের অসমাপ্ত কাজ দিয়ে আমি আমার কাজ শুরু করতে চাই। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিশোরগঞ্জকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চাই। সৈয়দ আশরাফ তার ব্যক্তিত্ব ও দুদর্শিতা দিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীকে সন্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আমি আমার জীবন দিয়ে চেষ্টা করব সেই সন্মান অক্ষুন্ন রাখতে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জাকিয়া নূর বলেন, এই সংসদের সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ নজরুল ইসলাম এবং সদ্য প্রায়ত আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আমি এই সংসদের সদস্য এর চেয়ে গর্বের আর কি হতে পারে। এখন আমার বড় আপা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন।

নিজের রাজনীতির হাতিখড়ি প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি রাজনীতির প্রতি আগ্রহ কিংবা সম্পৃক্ততা কবে থেকে শুরু হলো? রাজনীতির পরিবারে আমার জন্ম। আমাদের বৈঠকখানায় দেখতাম বাবার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওযার্দির বাধানো ছবি। একদিন আমার আব্বা আর আম্মা বললেন চলো নেতার কাছে যাই। স্থানটা ছিল মধুপুর গড় এর ভেতরে। যখন আব্বা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখন আমি, আমার ছোট বোন শেখ রাসেলের নেতৃত্বে ম্লোগান দিচ্ছিলাম জয় বাংলা। সেখান থেকেই রাজনীতির হাতেখড়ি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সেটাই ছিল রাজনীতির হাতেখড়ি। তারপর ১৯৭১, ১৯৭৫, স্বৈরাচার শাসন। চোখের সামনে ছাত্রলীগের নোমান ভাই এর মৃত্যু দেখেছি, কিন্তু মৃত্যু আমাদের ভয় পাওয়া শেখায়নি, নতুন উদ্যমে শিখিয়েছে কিভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পরাজিত করতে হয়। নিজের অতীত দুর্বিসহ জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, জীবন জীবিকার প্রয়োজনে খানিকটা বৈরি পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। আমি আবার ফিরে এসেছি আমার প্রাণের মাতৃভূমিতে, এর চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কি হতে পারে? খুব বেশিদিন আগের কথা না, প্রবাসে বিদেশি বন্ধুরা বাংলাদেশ বলতে ভারতবেষ্টিত বার্মার পাশে লোকে লোকারণ্য ছোট্ট একটি দেশ বুঝতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্ষুধা, দারিদ্র যার নিত্য সঙ্গী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এখন মাথা উঁচু করে বলতে পারি, আমি বাংলাদেশের মেয়ে, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আজ আমি গর্বিত এই উন্নয়নের মহাসড়কে অংশ গ্রহণের সুযোগ পেয়ে।

বাবা হত্যার পর সেই সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আজও আমার স্মৃতি জ্বল জ্বল করে ৭৫ পরবর্তী বিভিষিকা দিনের কথা। আমার পিতাকে হারিয়েছি। ঢাকা শহরে আমাদের থাকার মতো জায়গা ছিল না। আমার বড় দুইভাই তখন লন্ডনে নির্বাসিত। এখানে সেখানে মাস খানেক ঘুরে আমার মা আমাদের নিয়ে ময়মনসিংহে চলে গেলেন, মাথা গোজার ঠাঁই হলো। কিন্তু কি অদ্ভুদ দেশ কোনো সরকারি স্কুলে আমাদের ভর্তি করা হলো না। কি দোষ করেছিলাম আমরা? বাবাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হতো। উজ্জ্বল নক্ষত্রের মাঝে বাবাকে খুঁজতাম। পুরো ঘটনা বোঝার বয়স আগেই হয়েছিল, তবুও মিথ্যাটাকে বিশ্বাস করতে ভালো লাগতো, আমার মতো অসংখ্য শহীদের সন্তানদের চারদিকের বৈরিতাকে ভুলে থাকার জন্য।

তিনি যোগ করেন, যে আসনের আমি সংসদ সদস্য এখানে সামান্য কিছু শঙ্কা আমার মাঝে কাজ করছে। এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন আমার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাই এটি একটি স্পর্শকাতর আসন। তবে আমার কাছে অনুভূতির জায়গা, আশার জায়গা এই যে কিশোরগঞ্জবাসী ৬০ এর দশকের শুরু থেকে আমাদের পাশে আছেন এটি পরম আস্থার স্থান। বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের অসমাপ্ত কাজ দিয়ে আমি আমার কাজ শুরু করতে চাই। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিশোরগঞ্জকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চাই। সৈয়দ আশরাফ তার ব্যক্তিত্ব ও দুদর্শিতা দিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীকে সন্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আমি আমার জীবন দিয়ে চেষ্টা করব সেই সন্মান অক্ষুন্ন রাখতে।

জাকিয়া নূর বলেন, আমার উদ্দেশ্য এমন এক কিশোরগঞ্জ গড়া যেখানে সন্ত্রাস থাকবে না, মাদক থাকবে না, টেন্ডারবাজী থাকবে না। শুধু ভৌত উন্নয়নের দিকে দেখব না। আমার কাজের ধরণ হবে আমার মতো। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে আমার ভাই থেকে আলাদা। তবে একটা জাগয়ায় আমাদের লক্ষ্য এক এবং অভিন্ন, সৎ আদর্শ এবং কল্যাণের রাজনীতি করা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর