কখনও বাংলাদেশে আসেননি আইএসে যোগ দেওয়া শামিমা বেগম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:৩০
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
আইএসে যোগ দিয়ে ‘পোস্টার গার্ল’ বা ‘আইএস ব্রাইডে’ পরিণত হওয়া ব্রিটিশ নাগরিক শামিমা বেগমের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্ক্ষার খবর এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। কেউ কেউ তার নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন। এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে শামিমার বাংলাদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টিও। যদিও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামিমা বলছেন, তিনি কখনও বাংলাদেশে আসেননি বা এই দেশের কোনো পাসপোর্টও তার নেই।
শামিমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ইস্যুটি সামনে এলে অবশ্য আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবী তাসনিম আখুনজি। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে হতাশা জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, প্রয়োজনে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতেই তারা প্রস্তুত।
আরও পড়ুন- যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন আইএস ব্রাইড শামিমা বেগম
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে লন্ডন ছেড়ে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যান শামিমাসহ তিন ব্রিটিশ তরুণী। তবে শামিমা এখন আর আইএসের সঙ্গে জড়িত থাকতে চান না। ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে এখন তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে চান। আইএসের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি বাঘুজ ছাড়ার পর তাকে সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে খুঁজে পাওয়া যায়। ওই সময় তিনি এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামিমা বেগমের বাড়ি ফেরার আকুতির পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় সম্পর্কে বৈঠক করছে যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ।
ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, শামিমা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তার মা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলেন ব্রিটেনে। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক আইন বিশ্লেষক লর্ড কার্লাইলও বলছেন, শামিমার মা বাংলাদেশি নাগরিক হলে তিনি সে দেশেরই নাগরিক হবেন।
যদিও বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামিমা জানান, বাংলাদেশের কোনো পাসপোর্ট তার নেই এবং তিনি কখনোই বাংলাদেশ আসেননি। শামিমার আইনজীবী আখুনজিও বলেন, বাংলাদেশ সরকার শামিমার অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছুই জানে না।
আখুনজি বলছেন, শামিমার নাগরিকত্ব নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, তা কার্যত শামিমাকে রাষ্ট্রহীন করে তোলার জন্যই।
আরও পড়ুন- যুক্তরাজ্যে ফিরতে কারাবরণেও প্রস্তুত ‘জিহাদি ব্রাইড’ শামিমা
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ব্রিটিশ জাতীয়তা আইন অনুযায়ী, কারও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গলজনক— স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এমনটি প্রতীয়মান হলে তার নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া যাবে। তবে এর কারণে নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তি রাষ্ট্রহীন হবে না।
এদিকে, গত সপ্তাহে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন শামিমা। এর আগে আরও দুই সন্তানের জন্ম দেন তিনি, তবে তারা কেউই বেঁচে নেই। শামিমা জানান, তার সন্তান আইএস যোদ্ধা হোক— এমনটিই চেয়েছিলেন তিনি। তবে তৃতীয় সন্তানটি ব্রিটিশ নাগরিক হোক বলেই চান তিনি। তার নাম রেখেছেন ইসলামি যোদ্ধা জেরাহ’র নামে।
শামিমা জানান, তার স্বামী দুই সপ্তাহ আগে সিরীয় যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এরপরই ব্রিটেনে ফিরে আসার আগ্রহের কথা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে শামিমার সঙ্গে খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসে নামে আরও দুই ব্রিটিশ তরুণী সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এক বোমা হামলায় খাদিজার মৃত্যু হয়েছে। আর আবাসের অবস্থান নিশ্চিত নয়।
সারাবাংলা/আরএ