মৌলবাদের আঁধার বিনাশে ‘আলপনা উৎসব’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:৫১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: তিন দশক ধরে ছাত্রশিবিরের দখলে ছিল চট্টগ্রামের দুটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। শিবিরের বাধায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দূরে থাক, শহীদ দিবস-বিজয় দিবসের মতো জাতীয় কর্মসূচিগুলোও ঠিকভাবে পালন করা যেত না এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তিন বছর আগে শিবিরকে হটিয়ে কলেজ দুটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রলীগ। ধীরে ধীরে শুরু হয়েছে জাতীয় দিবসগুলো পালন, বাঙালির চিরায়ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।
এর ধারাবাহিকতায় এবার একুশে ফেব্রুয়ারিতে দু’টি কলেজের ক্যাম্পাস এবং আশপাশের সড়ক-দেওয়াল সেজেছে ভিন্নসাজে। আলপনায় নানান রঙের খেলা। তুলির আঁচড়ে শিল্পের রূপ। না, কোন চারুশিল্পী নন, কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসে এবং সড়কে আলপনা ও চিত্রকর্ম আঁকছেন, যাতে সহযোগিতা দিচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ।
সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ অঞ্জন নন্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমরা দিবসগুলো সুন্দরভাবে পালনের চেষ্টা করছি। এবার কলেজে আলপনা উৎসবের আয়োজন করেছি। শিক্ষার্থীরা খুব সুন্দরভাবে আলপনা এঁকে কলেজ ক্যাম্পাসকে সাজিয়ে তুলেছে। আমরা এসব সৃজনশীল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে চাই।’
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের শহীদ মিনার, প্রশাসনিক ভবন, লিচুতলা ও কাঁঠালতলা চত্বর, জিরো পয়েন্ট, অডিটোরিয়াম চত্বর এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরের সড়কে আঁকা হয়েছে আলপনা। কলেজের দেওয়ালেও ঠাঁই পেয়েছে চিত্রকর্ম।
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর পর আমরা গত চার বছর ধরে আলপনা আঁকার কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এতদিন ধরে শুধু শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আঁকতাম। এবার কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাজে সহযোগিতা দিয়েছে। সে জন্য বড় পরিসরে আমরা ক্যাম্পাসকে সাজিয়েছি।’
সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের শহীদ মিনার, একাডেমিক ভবন, ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরের সড়ক। দেয়ালে স্থান পেয়েছে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলো।
মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু ছাত্রলীগ নয়, কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও স্বত:স্ফূর্তভাবে এই কাজে অংশ নিয়েছেন। কলেজের তহবিল থেকে টাকা দিয়ে আমাদের রঙ কিনে দেওয়া হয়েছে। সে জন্য এবার বড় আকারে আলপনা উৎসব আমরা করেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন, বাঙালি সংস্কৃতি- সবকিছু পালনের মধ্য দিয়ে আমরা কলেজের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই।’
কলেজ দুটিতে দু’দিন ধরে চলা আলপনা আঁকার কর্মযজ্ঞ পূর্ণতা পেয়েছে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায়। এরপর প্রভাতফেরী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ মহান একুশে পালনে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
১৯৮১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজ গেইটে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা তবারক হোসেনকে হত্যা করেছিল শিবিরের সন্ত্রাসীরা। ১৯৮৪ সালের ২৮ মে ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার নেতা শাহাদাত হোসেনকে কলেজ ছাত্রাবাসে জবাই করে হত্যার মধ্য দিয়ে আধিপত্য শুরু শিবিরের। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে শিবির পুরোপুরি দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
ছাত্রশিবিরের সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হওয়া ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ধারার বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় তিন দশক ধরে ওই দুটি কলেজে কোনো কর্মকাণ্ডই ছিল না। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ক্যাম্পাস দখলে নেয়। এরপর থেকে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলে আসছে।
সারাবাংলা/আরডি/একে