শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় ভাষা শহিদদের স্মরণ করছে জাতি
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪১
।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আজ থেকে ৬৭ বছর আগে যারা মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে প্রাণ দিয়েছিলেন, গভীর শ্রদ্ধায় তাদের স্মরণ করছে গোটা জাতি।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত, অর্থাৎ একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নামে মানুষের ঢল। রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এপর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ও বিদেশি কূটনীতিকরা একে একে শ্রদ্ধা জানান।
শহিদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে শহীদ সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। একে একে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন। এসেছিলেন হাজারো সাধারণ মানুষ। অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে ফুল নিয়ে শহিদ মিনারে প্রবেশ করেন তারা।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে শহিদ মিনারের পশ্চিম পাশের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে পলাশী পর্যন্ত ছিল হাজারো মানুষের ভিড়। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এদের হাতে ছিল ফুল, ফুলের তোড়া, মালা ও ছিল বিভিন্ন আকৃতির পুষ্পস্তবক।
আজিমপুর থেকে ৬ বছরের শিশু তানহা নিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দিতে এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মাসুদ। এতো রাতে শিশু সন্তানকে নিয়ে ফুল দিতে আসার কারণ জানতে চাইলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার জন্য অনেকে প্রাণ দিয়েছিল। বাচ্চাকে নিয়ে সেই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এর মাধ্যমে মাতৃভাষার প্রতি তার ভালোবাসা জন্মাবে। মাতৃভাষার চেতনা নিজের ভেতরে লালন করে সে বড় হবে।’
শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল
প্রথম প্রহরে ফুল দিতে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ইসিয়াম। তিনি বলেন, ‘একুশ আমাদের অহংকার। ১৯৫২ সাল আমাদের সাহসী হতে শিখিয়েছে। যারা আমাদের এই সাহস দিয়েছে, তাদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। অনেক ভালো লাগছে।’
পুষ্পার্ঘ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি দিয়ে শহিদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলেন বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি) এর কয়েকজন শিক্ষার্থী। কিন্তু টিএসসির পথটি হলো শহিদ মিনার থেকে বের হওয়ার পথ। তাই তাদের আবার ঘুরে পলাশী দিয়ে শহীদ মিনারের উদ্দেশে যেতে হয়। সারাবাংলাকে তারা বলেন, অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে। তবুও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বাড়ি ফিরবেন তারা।
শুধু রাজধানীতেই নয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষ নিজ নিজ এলাকার শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। যেসব স্কুলে শহিদ মিনার আছে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এমনকি যেখানে শহিদ মিনার নেই সেখানেই স্থানীয়দের উদ্যোগে অস্থায়ী মিনার তৈরি করে ফুল দেওয়া হয়েছে শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে।
সারাবাংলা/কেকে/এসএমএন