Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চারটি ভবনে ছড়ায় আগুন, উদ্ধার হচ্ছে লাশ


২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৩

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চকবাজার থেকে: প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টার পরেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি রাজধানীর চকবাজারে লাগা আগুন। ছুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশে ওয়াহিদ ম্যানসনে লাগা আগুন পাশের তিনটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। বড় কাটারা কমিউনিটি সেন্টার, এর পূর্ব পাশের প্লাস্টিক কারখানা থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, আগুন লাগা চারটি ভবনের নিচে কমপক্ষে ত্রিশটির বেশি কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এসব গোডাউনের মধ্যে কয়েকটিতে গ্যাস সিলিন্ডার, বার্মিজ স্যান্ডেল, পারফিউম মজুদ করা ছিল। ভবনে লাগা আগুন এসব গোডাউনে ছড়িয়ে পড়লে আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে শুরু করে। যে শব্দ পাওয়া যাচ্ছে তা পারফিউমের বোতল বিস্ফোরণের।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টায় ফায়ার কন্ট্রোলরুমের ডিউটি অফিসার মাহফুজ রিবেন সারাবাংলাকে জানান, মোট ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে।

এদিকে ৭ জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করতে দেখা গেছে। আরও অনেকের নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সবুজ খান জানিয়েছেন, দুই ভবনে সারি সারি লাশ দেখেছেন তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০-৫০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। লোক মুখে শোনা যাচ্ছে, প্রায় ৫ জন মারা গেছেন। উদ্ধার তৎপরতা শেষ হলে আমরা সার্চ করবো, তারপর বিস্তারিত জানানো হবে। আমরা কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটলো।

আরও পড়ুন: চকবাজারে আগুনে দগ্ধ ১৮, নিয়ন্ত্রণে ৩৩ ইউনিট

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওয়াহিদ ম্যানসন এবং তার পাশের ভবনের আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। তবে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আর নেই।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে প্রথমে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন লাগে। এর পাশের আরও একটি চারতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আরও জানান, সরু গলি হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের কয়েকটি গাড়ির পানি শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তারা পানি দিয়ে আমাদের সহায়তা করছেন। আগুন লাগার পরপরই এই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আশেপাশে কেমিক্যালের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক ক্রেন ব্যবহার করা সম্ভব হলে আগুন নেভানো সহজ হতো।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, সচেতনতার অভাবে আজকের এ পরিস্থিতি। যদি আগে থেকে আবাসিক এলাকা থেকে কারখানা সরিয়ে নেওয়া হতো তাহলে আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। নিমতলী দুর্ঘটনার পর আমাদের সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাকিফ রহমান সারাবাংলাকে জানান, আমাদের কাছে ৪ জন এসছিল। ৩ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, ১ জন ভর্তি আছে।

আরও পড়ুন: বড় হচ্ছে চকবাজারের আগুন, সরু গলি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা

এদিকে আগুনে দগ্ধ এবং ভবন থেকে নামার সময় আহত অর্ধশত ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাত দেড়টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম সারাবাংলাকে বলেন, তাদের ইউনিটে এখন ১০ জনের মতো ভর্তি আছে। আরও এসেছিল যারা, তাদের অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১৮ জনের মতো হতে পারে। এদের মধ্যে দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্য যারা আছেন তাদের ক্ষত গুরুতর হলেও আশঙ্কাজনক বলা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়া রোগিদের একটি তালিকা দিয়েছে ইউনিট কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী, সেখানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেনম, রেজাউল করিম (২১), সেলিম (৪৮), আনোয়ার (৫৫), জাকির (৫০), মাহমুদ (৫৭), মুজাফ্ফর (৩২), হেলাল (২৫), রুহিনা (২৬), সোয়াদ (২২)।

আরও পড়ুন: কেমিক্যাল কারখানার বিরুদ্ধে ডিএসসিসি মেয়রের হুঁশিয়ারি

ঘটনাস্থলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত হয়েছেন।

সারাবাংলা/জেআইএল/জেএ/ইউজে/এসএসআর/এসএইচ/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর