সব পুড়ে ছাই, শুধু পড়ে ছিল ৪টি খুলি
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৩
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ব্যবসা করতেন চার বন্ধু মঞ্জু, হীরা, আনোয়ার ও নাসির। এদের মধ্যে মঞ্জুর ছিল পারিবারিক ওষুধের ব্যবসা। ছুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশে ওয়াহিদ ম্যানসনের উল্টো দিকেই ছিল মঞ্জুর ওষুধের দোকান হায়দার মেডিকো। আর চকবাজারেই ইমিটেশন গহনার ব্যবসা ছিল হীরার, আনোয়ারের ছিল ব্যাগের আর নাসিরের ছিল প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবসা।
রোজ কাজের ফাঁকে হায়দার মেডিকোতে এসে বসতেন মঞ্জুর তিন বন্ধু। একসঙ্গে গল্প গুজব করে কিছুক্ষণ সময় কাটাতেন নোয়াখালীর বাসিন্দা চার বন্ধু। তবে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের পর আর কখনও একসঙ্গে বসবেন না তারা। আর করবেন না সুখ-দুঃখের আলাপ। ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের সব গল্প, সব স্বপ্ন। এখন তাদের চিহ্ন বলতে চারটি পোড়া মাথার খুলি।
হায়দার মেডিকোর সামনে কথা হয় মঞ্জুর ভাই লিটনের সঙ্গে। বিকেলেই ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয় তার। তিনিই জানালেন, রোজ চার বন্ধু মিলে কিছুটা সময় কাটাতেন মঞ্জু। তাই হায়দার মেডিকোর ভেতরে পাওয়া পোড়া চারটি মাথার খুলি তার ভাইসহ চার বন্ধুর বলেই ধারণা করছেন তারা। কারণ মঞ্জুর সঙ্গে সঙ্গে হীরা, আনোয়ার আর নাসিরেরও আগুন লাগার পর থেকে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রত্যক্ষদর্শী আর অন্যদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লিটন সারাবাংলাকে বলেন, হাজী ওয়াহেদ ম্যানসন আর তাদের হায়দার মেডিকোর সামনেই একটি গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এসময় আতঙ্কিত লোকজন যখন ছুটোছুটি করছিলেন তখন বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে মঞ্জু ও তার তিন বন্ধু দোকানের ভেতর ঢুকে শাটার লাগিয়ে দেন। এরপরে যখন আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে যায় তখন আর সেখান থেকে বের হতে পারেননি তারা।
এদিকে আগুনের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চারজনের পরিবারের সদস্যরা টেলিফোন করতে শুরু করেন। কিন্তু এদের কেউই আর টেলিফোন ধরেননি। আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণের পর রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে হায়দার মেডিকো সনাক্ত করেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। ভেতরে ঢকে দেখতে পান পুরো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানের ওষুধ থেকে শুরু করে আসবাবের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। মেঝেতে কেবল পড়ে আছে কিছু পোড়া দেহাবশেষ। যার মধ্যে চারটি মাথার খুলিই কেবল সনাক্ত করা যাচ্ছে।
এই দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতদের স্বজনরা।
লিটন জানালেন, তাদের দোকানের দুইপাশে ছিল পারফিউমের দোকান, উল্টো দিকেই ছিল রাজমহল হোটেল। যেখান থেকে মূলত আগুনের সূত্রপাত। মঞ্জু জানান, তিনি শুনেছেন আগুন লাগার পর পারফিউমের দোকানের বোতলগুলো একে একে বিস্ফোরিত হচ্ছিলো। সেখান থেকেই তাদের দোকানে আগুন লাগে বলে তিনি ধারণা করছেন।
আরও পড়ুন: চারটি ভবনে ছড়ায় আগুন, উদ্ধার হচ্ছে লাশ
ফের বাড়ছে চকবাজারের আগুন, নিয়ন্ত্রণে যোগ দিলো বিমান বাহিনী
সারাবাংলা/ইউজে/এসএমএন