ঢামেক-সলিমুল্লায় উদ্বিগ্ন স্বজনদের ভিড়
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:২০
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর চকবাজারের বাসিন্দা আয়েশা বেগম। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ডায়াবেটিকের ওষুধ কিনতে। এরপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি। আয়েশা বেগম কোথায় আছেন, বেঁচে আছেন নাকি নেই তা জানে না তার পরিবার।
বুধবার গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছেন আয়েশার স্বজনরা। শুরুতে খোঁজ করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে না পেয়ে এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে আহতদের যে নামের তালিকা টানানো হয়েছে সেখানেও নেই তার নাম।
ওষুধ কিনতে গিয়ে কোথায় হারালেন আয়েশা? এই প্রশ্নেরই এখন উত্তর খুঁজছেন তার স্বজনরা।
আয়শা বেগমের স্বজনদের মতো ঢামেক, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ভিড় জমিয়েছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।
ঢামেকেই কথা হয় আবদুর রহিম, এনামুল হকসহ নিখোঁজ কয়েকজনের উদ্বিগ্ন স্বজনের সঙ্গে।
জানা গেলো চকবাজারের ছুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশের এলাকায় একটি খেলনার দোকানের মালিক আবদুর রহিম। সবশেষে বুধবার রাত ১০টা ৩৩ মিনিটে তার সঙ্গে কথা হয় পরিবারের সদস্যদের। সেসময় তিনি জানিয়েছিলেন, বাসায় ফিরছেন। কিন্তু তিনিও ফেরেননি। ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেকের মতো তাকেও ঢামেকে খুঁজতে এসেছেন স্বজনরা।
একই এলাকায় খেলনার দোকান ছিল এনামুল হকের। ৩৩ বছরের ছেলে বাড়িতে না ফেরায় তার বৃদ্ধ বাবা আমজাদ হোসেন ঢামেকের জরুরি বিভাগে খুঁজে ফিরছেন তাকে। যাকে পাচ্ছেন তাকেই জিজ্ঞাসা করছেন, ‘আমার ছেলেটা কোথায়?’
আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এনামুলের মাকে আমি বলে এসেছি যে ছেলেকে নিয়েই বাসায় যাবো। কিন্তু আমি এখনও ছেলেটাকে খুঁজে পাইনি। আহতদের লিস্টেও তার নাম নেই।’
উদ্বিগ্ন স্বজনদের দাবি, গোটা চকবাজার এলাকার ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ।
আসিফ নামে একজনকে খুঁজতে এসেছেন তার ভাই আকবর। তিনি জানান, এলাকায় দোকান ছিল তাদের। দিনের কাজ শেষে দোকান বন্ধ করে কর্মচারিকে সঙ্গে নিয়ে আসিফ বাসার দিকে রওনা দেন। কিন্তু ওই এলাকার পাশে আসতেই তাদের রিকশার ওপর পাশের ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। এতে কর্মচারিসহ আহত হন তার ভাই। আহত কর্মচারিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভাই আসিফ কোথায় জানেন না আকবর। আহত কর্মচারিটি তাকে জানিয়েছেন, রিকশা চলছিল হঠাৎ করে কিছু একটা এসে পড়ে। এতে ভাই একদিকে পড়ে যান অন্যদিকে পড়েন কর্মচারীটি।
ফের বাড়ছে চকবাজারের আগুন, নিয়ন্ত্রণে যোগ দিলো বিমান বাহিনী
আকবরের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিলো তখন পাশে এসে দাঁড়ান আনোয়ার হোসেন। ওই্ এলাকার খান মার্কেটে ছাতার দোকান ছিল তাদের। দোকানের আটজন কর্মচারীর কাউকেই এখন আর পাচ্ছেন না। সবাই নিখোঁজ। আনোয়ার জানেন না এরা কেউ বেঁচে আছেন কিনা। তাদের খোঁজে সলিমুল্লাহ মেডিকেল ঘুরে এসেছেন ঢামেকে। কিন্তু কারোরই সন্ধান পাননি।
অন্যদিকে নিজের মোবাইলে থাকা একমাত্র ভাই মাহিদের ছবি হাতে নিয়ে ঘুরছিলেন তার বোন। সামনে যাকেই পাচ্ছেন তাকেই ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন ভাইকে কোথাও কেউ দেখেছেন কিনা?
উদ্বিগ্ন এই বোন বলেন, ভাইয়ের ফোন বন্ধ পাওয়ার পর থেকেই তিনি তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ছুটে এসেছেন হাসপাতালে, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তা দেখতে পান তিনি। বলেন, ‘প্রথমে দেখলাম ভবন থেকে গুড়া গুড়া কিছু একটা পড়ছিল। তারপরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো এলাকা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। কিভাবে আগুন এতোটা ছড়িয়ে গেল সেটাই আমাদের প্রশ্ন। এই পরান ঢাকাতেই এর আগেও নিমতলীর মতো ঘটনা ঘটেছে। তারপর আমরা শুনেছি কত কথা। কিন্তু আমরা সেখান থেকে শিক্ষা নিইনি।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘কত মানুষ যে নিখোঁজ হয়েছে, কত মানুষ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব লাশ হয়তো হাসপাতাল পর্যন্ত আসবেও না। সবাইকে কী তাহলে একটু মাটিও দেওয়া যাবে না? আমরা কি জানতেও পারবো না? কবরটাও দেখতে পারবো না। আমরা পুরান ঢাকায় যারা থাকি এই পাপ কী আমাদের?’
সারাবাংলা/জেএ/এসএমএন