Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সব পথ মিশে গেছে স্মৃতির মিনারে


২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫১

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে: শহীদুল ইসলাম সায়েম, জাহিদ হাসান, রায়হান শুভ— ১৩/১৪ বছর বয়সী এই বালকগুলো আজ ঘুম থেকে উঠেছে ভোর সাড়ে ৫টায়। তারা সবাই লালবাগের বাসিন্দা। থাকে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে। পড়ে ‘ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল’-এ।

আরও পড়ুন- রাতের প্রভাতফেরি এসে মিশেছে ভোরের সূর্যোদয়ে

নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। কিন্তু তাতে কী হয়েছে! মাতৃভাষার জন্য পূর্বপুরুষের যে আত্মত্যাগ, সে বিষয়টি তারা বেমালুম ভুলে থাকেনি। অথবা মা-বাবা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ভুলে থাকতে দেয়নি। তাই ভোর ৬টায় এসে প্রভাতফেরির মিছিলে যোগ দিয়েছে তারা।

তবে ভোর ৬টায় পলাশী মোড় থেকে তাদের যাত্রা শুরু হলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে যায় সকাল সোয়া ৮টা। বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ মেলে সকাল সাড়ে ৮টায়।

তাতেও কোনো ক্লান্তি নেই রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের এই উত্তরসূরীদের। আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে স্মৃতির মিনারে শ্রদ্ধার ফুল অর্পণ করতে পেরে তারা বেজায় খুশি।

আরও পড়ুন- শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় ভাষা শহিদদের স্মরণ করছে জাতি

পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের আগে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় এই তিন ক্ষুদে ভাষাপ্রেমীর। তারা জানান, শহিদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে ভীষণ খুশি তারা।

সকাল পৌনে ৯টায় শহিদ মিনারের প্রবেশপথে দেখা হয় আয়শা আক্তার তানিয়া, খাদিজা আক্তার তানজিনা, রুবাইয়াত জান্নাতি, রূপোমা আফরোজদের সঙ্গে। ওরাও ভোর ৬টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছে পলাশী মোড়ে। ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও নেই কোনো অনুযোগ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলাকে আয়শা আক্তার তানিয়ার বলে, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ফুলে গেছে। কিন্তু কোনো কষ্ট পাচ্ছি না। সবার সঙ্গে ফুল দিতে এসে ভালো লাগছে।

কেবল নবীন এই শিক্ষার্থীরা নয়, আজ গোটা শহরের সব মানুষের গন্তব্য যেন শহিদ মিনার। নানা শ্রেণিপেশার হাজার হাজার মানুষ হাতে ফুল, মুখে একুশের গান নিয়ে হাজির হয়েছেন স্মৃতির মিনারে।

আরও পড়ুন- শহিদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

সকাল ৯টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব হোসন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শহিদদের। শহিদ মিনারে পৌঁছানোর পর তাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান।

শুধু বাংলাদেশ নয়, ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিদেশিরাও এসেছেন শহিদ মিনারে। সকাল ৮টায় বিশ্বভারতী শান্তি নিকেতনের একটি প্রতিনিধি দল শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানায়।

এদিকে, দীর্ঘ লাইন বেয়ে শহিদ মিনার এলাকায় বাউন্ডারি পার হওয়ার সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের আচরণে অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পুলিশের আচরণ আরেকটু জনবান্ধব হওয়া দরকার।

এর আগে, একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। এরপর একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহিদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন। রাত বাড়তে থাকলেও কমেনি শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ভিড়। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি অভিভাবকের হাত ধরে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছে শিশুরাও।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা শহিদ মিনার

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর