Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিকআপের সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত, দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের


২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:৩৮ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:৫০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: নিমতলী ট্র্যাজেডির পর ফের ফের আগুনের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করল পুরান ঢাকা। চকবাজারের চুরিহাট্টা মসজিদ রোডের হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে আগুন লেগে দ্গ্ধ হয়েছেন শতাধিক মানুষ। এ পর্যন্ত মরদেহই উদ্ধার করা হয়েছে ৮১টি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভয়াবহ এ আগুনের সূত্রপাত ওই ভবনের সামনে থাকা এক পিকআপের সিলিন্ডার থেকে। ওই সিলিন্ডারের আগুন পাশের আমানিয়া হোটেলে ছড়িয়ে পড়লে সেখানকার কয়েকটি সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়। তবে ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছিল কেমিক্যাল গোডাউন। সেখানে আগুন পৌঁছালে তা আর দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আরও চারটি ভবনে।

বিজ্ঞাপন

এ দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও চুরিহাট্টা মোড়ের পাশে ১৬ নম্বর নন্দ কুমার দত্ত রোডের বাসিন্দা মো. মঈন উদ্দিন সারাবাংলাকে (৬৬) বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা এখানে-ওখানে বোমা ফেলত। ওই বোমার যে ভয়াবহ শব্দ, মনে হলো তার চেয়েও ভয়াবহ শব্দ। সামনে তাকাতেই দেখি, জ্বলন্ত একটি পিকআপ তিন তলা বিল্ডিংয়ের সমান উঁচুতে উঠে প্রচণ্ড শব্দে আছড়ে পড়ে রাস্তায়। চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তার দিকে না এসে পরিবার নিয়ে বিল্ডিংয়ের পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যাই।

আরও পড়ুন- ভয়ংকর আগুনের থাবায় মৃত্যুপুরী চকবাজার

পাশের নন্দ কুমার দত্ত ১৪ নম্বর স্থায়ী বাসিন্দা আশিক উদ্দিন সৈনিক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, তখন সাড়ে ১০টার মতো বাজে। রাস্তাতেই ছিলাম। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি, একটা পিকআপ দুই তলারও বেশি উঁচুতে উঠে গেছে। ধপাস করে সেটা মাটিতে পড়তেই আগুন পাশের আমানিয়া হোটেলে রাখা সিলিন্ডারে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সিলিন্ডারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।

আশিক উদ্দিন বলেন, আমরা যতদূর দেখেছি, আগুনের সূত্রপাত্র গাড়ি থেকেই। ওই গাড়ির আগুনই ছড়িয়ে পড়ে আমানিয়া হোটেলে, সেখান থেকে ওয়াহেদ ম্যানসনে। ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় পারফিউমের বিশাল গোডাউন ছিল। ওখানে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় তলার দেয়ালটি ভেঙে পাশের বিল্ডিং ও রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে।

আরও পড়ুন- ৩ বন্ধু বেঁচে ফিরেছে, একজন লাশ, এখনও নিখোঁজ রোহান

চুরিহাট্টার এই স্থায়ী বাসিন্দা আরও বলেন, ওই সময় রাস্তায় যারা ছিলেন, সবাই স্পট ডেড হয়ে যান। একটি ভ্যান, একটি রিশকা, কয়েকটি মোটরসাইকেল, দুইটি প্রাইভেট কার, একটি পিকআপ ভ্যান, দুইটি ঠেলাগাড়ি ছিল রাস্তায়। এগুলো তো বটেই, ওখানকার ফার্মেসিসহ কয়েকটি দোকানে ৩/৪ সেকেন্ডের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ভয়ংকর এই আগুনে নিজের কোনো ক্ষতি না হলেও স্বজন হারিয়েছেন আশিক। জানান, তার কলেজ পড়ুয়া চাচাত ভাই ওয়াসিউদ্দিন মাহি (২০) ছিলেন পাশের এক বাসাতে। আগুন লাগার সময় নিজের বাসায় ফিরছিলেন। পথেই আগুনে পুড়ে প্রাণ হারান তিনি।

আরও পড়ুন- আগুন আতঙ্কে কেটেছে সারারাত!

আশিক উদ্দিন জানান, আগুন লাগার ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলে আসে। তবে রাস্তা সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো আসতে সমস্যা হয়। তারপরও স্থানীয়দের সহায়তায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস কাজ করেছে বলে মনে করছেন তিনি।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মো. শিমুল বলেন, বাসা থেকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আমি এখানে চলে আসি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভেতরে যেতে দেয়নি। পরে কাঠারা কমিউনিটি সেন্টারের ছাদে গিয়ে দেখতে পাই, বেশ কয়েকটি বিল্ডিংয়ে আগুন জ্বলছে।

আরও পড়ুন- লাশ বেড়ে ৮১, ঠাঁই হচ্ছে না ঢামেক মর্গে!

আগুন লাগার কারণ নিয়ে অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, আগুন কোথায় থেকে কিভাবে লেগেছে, তা তদন্ত না করে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তদন্তের পর এ সম্পর্কে বলা যাবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘটনাস্থল চকবাজারের চুরিহাট্টা মসজিদ মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি ভবন ও চুরিহাট্টা শাহী জামে মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই আগুনে। এর মধ্য চার তলা ওয়াহেদ ম্যানসন ভবনটি দেয়ালসহ ভেঙে পড়েছে। কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। ভবন সংলগ্ন পূর্ব দিকের যে ভবনে হোটেল আমানিয়া অবস্থিত, সেই ভবনটিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওয়াহেদ ম্যানসনের উত্তর পাশের চার তলা ভবনটিও পুরোটা পুড়ে গেছে আগুনে। ওই ভবনের নিচ তলার কয়েকটি দোকানও পুড়ে ছাই। এছাড়াও ওয়াহিদ ভবনের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের দুইটি ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ওয়াহেদ ম্যানসনের পশ্চিম-উত্তর দিকে অবস্থিত চকবাজার চুরিহাট্টা শাহী জামে মসজিদের সামনের দেওয়ালের টাইলস আগুনে রীতিমতো গলে গেছে।

আরও পড়ুন- ‘শিশুটিকে কোলে রেখেই পুড়ে গেলেন মা’

এদিকে, পাঁচটি রাস্তার সংযোগস্থল চুরিহাট্টা মোড় ও মোড় সংলগ্ন গলিতে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে পড়ে আছে দুইটি প্রাইভেট কার, দুইটি পিকআপ ভ্যান, চারটি ঠেলাগাড়ি, ৮/১০টি মোটরসাইকেল, দুইটি অটোরিকশাসহ ৩০ থেকে ৩৫টি রিকশার ভস্মীভূত অংশ।

বুধবার রাতের এই অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৮১টি মরদেহ উদ্ধার করে নেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দগ্ধ আরও ৪১ জন জনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। আগুন লাগার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্ভব হয় ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

চকবাজারের আগুন প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য