উদ্ধার অভিযান শেষ, চকবাজারে ফায়ার সার্ভিসের ৩ ইউনিট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৪৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চকবাজার থেকে: পুরান ঢাকার চকবাজারে আগুন লাগার ঘটনায় উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তবে ওয়াহিদ ম্যানসন ও আশেপাশের এলাকায় এখনও ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট রয়েছে। তারা উদ্ধার অভিযান পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেখানে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে চকবাজারে এক ব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ উদ্ধার অভিযান শেষ ঘোষণা করেন।
মেয়র জানান, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হতাহতদের খোঁজ নেওয়ার জন্য ডিএসসসিসি হটলাইন চালু করেছে। হটলাইন নম্বর ৯৫৫৬০১৪।
এ সময় মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘এ ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের ডিএসসিসি’র জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা যাবে। যারা হতাহত হয়েছে, তাদের সবার তালিকা করে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে।’
ফায়ার সার্ভিসের তিনটি টিমের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘তিনটি টিম এখানে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। কোনোভাব যেন আগুন আবার না লাগে বা ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।’
এদিকে দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশের সড়ক পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেবাদাতা সংস্থাটির ৫/৭ জন পরিচ্ছনতাকর্মী এসে সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছেন। এরইমধ্যে সেখানে ময়লাবাহী তিনটি ট্রাক এসেছে।
দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে উৎসুক জনতার ভিড়ও রয়েছে। এই এলাকার মুরব্বি শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার লাইসেন্স দেয়, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন।’
তিনি জানান, ওয়াহিদ ম্যানসনের মালিক কয়েকদিন আগে চীন থেকে পারফিউম, লোশন এসব এনেছে। এই কারণে আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় বেশি মানুষ মারা গেছে।
চকবাজারের আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয় ব্রিফিংয়ে। বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালককে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করলে প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ টেনে মেয়র বলেন, আমরা সোমবার থেকেই পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদের জন্য অভিযান শুরু করেছি। এর মধ্যেই এই ঘটনা ঘটল। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এখান থেকে কোনোভাবেই কেমিক্যাল গোডাউন থাকতে দেওয়া হবে।
২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে এমনই এক কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লাগলে শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারান। ওই সময় বলা হয়েছিল— পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যাল কারখানা বা গোডাউন থাকবে না, এসব গোডাউন ও কারখানা উচ্ছেদে অভিযান চলবে। এ অভিযান কতদিন চলবে— জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘আমরা অভিযান শুরু করেছি, অভিযান চলবে।’
মেয়র জানান, এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ৪১ জন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৩০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, সেখানকার মর্গে এখন মোট ৮১টি লাশ রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে
আরও পড়ুন
৩ বন্ধু বেঁচে ফিরেছে, একজন লাশ, এখনও নিখোঁজ রোহান
লাশ বেড়ে ৮১, ঠাঁই হচ্ছে না ঢামেক মর্গে!
‘শিশুটিকে কোলে রেখেই পুড়ে গেলেন মা’
‘সব বডি পুড়ে কয়লা, ভাইয়ের লাশটাই খুঁজে পাচ্ছি না’
সব পুড়ে ছাই, শুধু পড়ে ছিল ৪টি খুলি
মর্গ উপচে লাশের সারি বারান্দায়, ব্যাগের ছাইয়ে প্রিয়জনের খোঁজ