।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ১১ মাস বয়স যমজ শিশু দুটির। একজন মায়ের কোলে আরেকজন চাচার কোলে। না কোনো আনন্দ উৎসবে আসেনি। তারা এসেছে বাবার খোঁজে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে শত শত মানুষের মতো তারাও মা ও চাচার কোলে চড়ে এসেছে বাবা মোহাম্মদ কাওসার আহমেদের খোঁজে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের আগুনে ঘটনায় নিহতদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাওসার আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী। কাউসার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি চকবাজারে মদিনা মেডিকেল হল নামের একটি ক্লিনিক চালাতেন। গতকাল চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকাতে যখন আগুন লাগে, তখন কাওসার তার ক্লিনিকেই ছিলেন।
নিহত ছেলের খোঁজে কাওসারের মা
কাওসারের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে বন্ধু মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, ‘সেখানে কাওসার একটি ফার্মেসি ও ডেন্টালের দোকান ছিল। তার লাশ শনাক্ত করা গেছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। পরিবার লাশ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।’
জানতে চাইলে কাওসারের ভাই ইলিয়াস বলেন, ‘কাওসারের দুটি সন্তান রয়েছে। একজন মেয়ে, অন্যজন ছেলে। তাদের নাম আব্দুল্লাহ ও মেহজাবীন। ছেলে-মেয়ে দুটি সকাল থেকেই কেঁদে চলছে। থামানো যাচ্ছে না কান্না। আর তার মা যাকে দেখছেন তাকেই বলছেন,আমার কাওসারকে এনে দাও, কাওসার চলে যেতে পারে না। আমাদের ছেড়ে আমার ছেলে চলে যেতে পারে। এই আমি বিশ্বাস করি না।’
আরও পড়ুন: ৩ বন্ধু বেঁচে ফিরেছে, একজন লাশ, এখনও নিখোঁজ রোহান
ইলিয়াস বলেন, আগুন যখন লাগে, তখন ক্লিনিকের গেট বন্ধ ছিল, আর করেই বোধহয় ভেতরের সবাই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ক্লিনিকের ভেতরে তার সঙ্গে আর মারা গেছেন, বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজের ১৯তম ব্যাচের শেষবর্ষের ছাত্র ইমতিয়াজ ইমরোজ রাসু ও মো. আশরাফুল হক।

মায়ের কোলে চড়ে বাবার সন্ধানে শিশু
এরমধ্যে ইমতিয়াজ ইমরোজ রাশুর সামনে পরীক্ষা থাকায় ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের জন্য পুরান ঢাকার চকবাজারে একটি ক্লিনিকে কিছুটা সময় দিতেন গত মাসখানেক ধরে। থাকতেন ধানমন্ডির মধুবাজারে অবস্থিত কলেজের হলে। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অন্যদিনের মতোই গিয়েছিলেন চকবাজারের চুড়িহাট্টার গলির সেই ক্লিনিকে।
একইবর্ষের ছাত্র মো. আশরাফুল হক। থাকেন পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মগবাজারে। দাঁতে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল কিছুদিন ধরে। বন্ধু রাসুর পরামর্শে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চকবাজারে সেই ডেন্টাল ক্লিনিকে গিয়েছিল। যে ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়ার জন্যে ওর যাওয়ার কথা, সেই ডাক্তার উপস্থিত না থাকায় দুই বন্ধু অপেক্ষা করছিলেন।

চাচার কোলে চড়ে বাবাকে খুঁজতে এসেছে শিশু
অপেক্ষার প্রহর শেষ করে দুই বন্ধুর কেউই আর ফিরে আসেননি চকবাজারের চুড়িহাট্টার সরু গলি থেকে। রাতেই খোঁজাখুঁজি করছিলেন আশরাফুলের পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পাওয়া যায়নি। দুই জনের মোবাইলই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) হলে না ফেরা রাসুর হলের সহপাঠীরা খোঁজা শুরু করেন। আর তখনই তাদের মনে পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা। সকালেই তারা জানতে পারেন, রাসু যে ক্লিনিকে কাজ করতেন, সেখানের মালিক মারা গেছেন। সেই খবর পেয়েই সহপাঠীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে বন্ধুকে ফিরে পাওয়া আশায় খোঁজা শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ‘সব বডি পুড়ে কয়লা, ভাইয়ের লাশটাই খুঁজে পাচ্ছি না’
উল্লেখ্য, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে দশটার রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার ওয়াহিদ ম্যানশনে আগুন লাগে। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন আশেপাশের আরও চারটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থলে নিহতের লাশ ঢামেকের মর্গে রাখা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার লাশ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু করে ঢাকা জেলা প্রশাসন।
সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ