Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গাদের কেন রাখা সম্ভব নয়? জানুন সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিশ্লেষণে


১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:৪২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার লেখা একটি নিবন্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট ও তা সমাধানে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটে লেখাটি ১৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) প্রকাশিত হয়েছে।
কি লিখেছেন সজীব ওয়াজেদ জয় তার বিশ্লেষণে? পড়ুন এখানে—

গত আগস্ট থেকে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী পশ্চিম মিয়ানমারে তাদের নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এই মানুষগুলো এসে যোগ দিয়েছে তাদেরই ভাই কিংবা বোনদের সাথে, যারা লাখে লাখে এসে পড়েছিলো আরও আগে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞ ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার মতো নৃশংস ঘটনার পর নিজ দেশ থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ যাকে ‘জাতিগত বিনাশের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলেই উল্লেখ করেছে।

বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে গেছে, কিভাবে এই রোহিঙ্গাদের আবার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আর অতি সম্প্রতি দুই পক্ষ এই মর্মে ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে, আগামী দুই বছর সময় ধরে এই শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ শরণার্থী শিবিরের সংখ্যা বাড়িয়েছে, সেগুলো উন্নত করেছে। নতুন নতুন শিবির তৈরি করার কাজও চলছে। শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে, নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত করছে যাতে তারা নিয়মিত সহায়তাগুলো পেতে পারে। তাদের বসবাসের জন্য ঘর সহ অন্যন্য স্থাপনাও তৈরি করে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এই কাজগুলো বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। পোপ ফ্র্যান্সিসও গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এরপরেও কেউ কেউ বাংলাদেশের সমালোচনা করছেন এই বলে যে, রোহিঙ্গাদের তাদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, এবং তাদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি মিলছে না। সহানুভূতির অভাবের কারণে এমনটা ঘটছে তা নয়, বরং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই নীতি।

যে মাত্রায় নৃশংসতা হয়েছে তা কোনোভাবেই ন্যায্যতা পাওয়ার নয়, তবে মিডিয়াগুলোতে খবর হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক ক্র্যাকডাউনের শুরুটা হয়, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা নামে পরিচিত রোহিঙ্গা জঙ্গি গ্রুপ মিয়ানমারের ১২ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হত্যার পর। এই জঙ্গি গ্রুপটির সঙ্গে আইসিসের যোগসাজশ রয়েছে। যদিও আরসা তা অস্বীকার করে বলছে, তাদের লড়াই মূলত রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা উদ্বেগটা সেখান থেকেই উৎসারিত। কারণ এটাই বাস্তবতা যে, ঢেউয়ের মতো আসতে থাকা শরণার্থী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সশস্ত্র আরসা জঙ্গিরাও ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে। আর তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে চরমপন্থা কাজে লাগাতে শুরু করেছে।

দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ডিসেম্বরে রিচার্ড হোরসের একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। মিয়ানমারে বসবাসকারী এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক লিখেছেন— ‘কোনও জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশাহীনতা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিলে চরমপন্থীরা নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দলভারী করার সুযোগ নেয়। আরসার জন্য তাদের দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে এমন তরুণ ও যুবকদের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে খুঁজে বের করা এখন মোটেই কঠিন হবে না।”

ঠিক এই কারণেই দেশের সর্বত্র রোহিঙ্গাদের অবাধ ঘোরাফেরার অনুমতি দিতে পারে না বাংলাদেশ। এই জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের নতুন নতুন সদস্য নিয়োগ করে আন্তঃসীমান্ত হামলা চালাবে না, কিংবা বাংলাদেশের ভিতরেই সন্ত্রাস ছড়াবে না, এমন নিশ্চয়তা সরকার কী করে দেবে?

বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে এমন ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে শরণার্থী মর্যাদা দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশের মধ্যে নিয়ে নিলে তা এক ঝটকায় দেশের মোট জনসংখ্যা ১ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন ঘটনায় যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে এখানেও তেমনটাই ঘটতে পারে। এ ছাড়াও, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সকলেই সূচকের সবচেয়ে নিচের স্তরের মানুষ, যা জাতির সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপরেও হয়ে উঠবে এক বিশাল বোঝা।

অব্যাহত উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন এক গর্বিত জাতি। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যবিত্তের আওতায় এসে গেছে, এবং এর বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি। তবে বাংলাদেশ কোনও ধনী দেশ নয়। রোহিঙ্গাদের কিছু দিনের জন্য সহায়তা করতে পারে বাংলাদেশ, নিজস্ব সম্পদ ও ব্যবস্থাপনায় তা করেও যাচ্ছে। কিন্তু সকল রোহিঙ্গাকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে একটি বড় ধাক্কা যা সামাল দেওয়া প্রত্যেকের জন্যই হবে কষ্টসাধ্য।

রোহিঙ্গারা ছাড়া আর কেউই কখনো বাংলাদেশে অভিবাসী হতে চায়নি। যে কারণে, উন্নত দেশগুলোর মতো করে বাংলাদেশে কোনো অভিবাসন পদ্ধতিও নেই। একটি মাত্র পথেই যে কেউ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে পারে, তা হচ্ছে বিয়ে করা, কিংবা বাবা-মায়ের কেউ একজন যদি হন বাংলাদেশি। জনস্থানসূত্রেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব মেলে না। সে কারণে এই শরণার্থীদের পক্ষে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনও আইনি পথই খোলা নেই।

রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া এবং একই সাথে দেশের ভেতরে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এমন দুটি পরস্পরবিরোধী চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের জন্য যতটুকু করার তা বাংলাদেশ করবে, একই সাথে ওদের প্রত্যাবসন নিয়েও মিয়ানমার সরকারের সাথে কাজ করে যাবে। আর বাংলাদেশ অবশ্যই তার নিজের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে রুখে দিল নিউক্যাসেল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৮

সম্পর্কিত খবর