Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মাকে বলেছি— পিছু ডেকো না, শুধু দোয়া করো’


২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:০১

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘এখানে কাজ করতে আসার আগে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে এসেছি, তুমি আমাকে পিছু ডেকো না, কেবল আমাদের জন্য দোয়া করো। বলেই চলে এসছি। এ ধরনের দুর্যোগে আমি বাসায় বসে থাকতে পারি না। মানুষ যদি মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে কী করে হবে?

আরও পড়ুন- ‘গ্যাস সিলিন্ডারের নামে পারমানবিক বোমা চাই না’

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে ঢোকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে সারাবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। ভয়াবহ আগুনে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া চকবাজারে নিরলসভাবে উদ্ধার কাজে সহায়তা করা ৪০ জন রোভার স্কাউটের দলের একজন তিনি। বাংলাদেশ স্কাউটসের সমাজ, উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিচালক গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে সোহানের মতোই কাজ করেছেন সাবরিনা ইয়াসমিন মিতু, মো. আল আমিন, মো. আকাশ হোসেন, আছিয়া আক্তাররা।

চকবাজারের সেই আগুনের ভয়াবহতায় একের পর এক লাশ হয়ে যখন ভিড় জমিয়েছে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে, তখন সেখানেও জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্রকে সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছিলেন সোহানরা।

সোহান জানালেন, যেকোনো দুর্যোগেই রোভার স্কাউটের সদস্যরা ছুটে যান। সহায়তা করেন ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সোহানের যেমন এবারই প্রথম নয়, এর আগে রানা প্লাজা ধসের সময়ও উদ্ধার কাজ করেছেন তিনি। সোহান বলেন, ‘২০১৩ সালে যখন রানা প্লাজাতে কাজ করেছি, তখন আমি অনেক ছোট। তখন বড়রা যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে এসে কাজ করেছি। এতটা বুঝতামও না। কিন্তু তখনও এটুকু বুঝতাম, এমন কোনো দুর্যোগে ঘরে বসে থাকা যায় না। এখন তো বড় হয়েছি। তাই সবাইকে নিয়ে ছুটে এসেছি।’

আরও পড়ুন- সকালে চকবাজার পরিদর্শনে যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

রোভার স্কাউটের দলটির নেতৃত্বে থাকা গোলাম মোস্তফা জানালেন, বুধবার রাতে চকবাজারের হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে আগুন লাগার পর সারারাত সেখানে কাজ করেছেন রোভার স্কাউটের ৪০ জন সদস্য। পরদিন বৃহস্পতিবার ঢামেকের মর্গে জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্রকে নানাভাবে সহযোগিতা করতে উপস্থিত ছিল তাদের ১০ জনের একটি দল।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের সময়ও রোভার স্কাউটের এই দলটি নিয়ে কাজ করেছেন গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘সেই সময় তো সবচেয়ে ভয়ংকর কাজটিই এসব বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা করেছে।’ কী ছিল সে কাজ— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডেডবডি ম্যানজমেন্ট’।

আরও পড়ুন- আগুনে পোড়া ১৪জনকে দাফন, আজিমপুর খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সেখানে একটা সময়ের পর লাশগুলো থেকে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল। লাশগুলোর এমন অবস্থা যে শরীরের কোনো একটি অঙ্গ ধরতে গেলে খুলে আসত। হাত-পা ভাঙা, ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশগুলোর কাছে অনেকেই যেতে চাইত না। তখন এই রোভার স্কাউটের অনেকেই সেখানে কাজ করেছে।’

২০১৩ সালে রানা প্লাজায় কাজ করা সোহান এখন সিদ্ধেশ্বরী ইউনিভার্সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজার সময়ে অনেক ছোট ছিলাম। তাই খুব বেশি কাজ করতে দেয়নি। কিন্তু চকবাজারের কথা শুনে আমরা ছুটে গিয়েছি। সেখান থেকে লাশ বের করা, প্রশাসনকে সাহায্য করাসহ উৎসুক জনতাকে ঘটনাস্থল থেকে দূরে রাখার কাজ করেছি। সেখান থেকে চলে এসেছি মর্গে, এখানেও প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছি।’

আরও পড়ুন- বাণিজ্য এলাকা ও বসতি একসঙ্গে চলতে পারে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দলের আরেক আছিয়া আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ক্লাস সিক্স থেকে স্কাউটে কাজ করছি। যেকোনো বিপদে মানুষের পাশে কাজ করলে ভালো লাগে। যেকোনো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তারা কাজ করতে সবসময় প্রস্তুত বলেও জানান।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর