‘কেমিক্যাল অবশ্যই ছিল, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না’
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:২৭
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: চকবাজারের হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে নিশ্চিতভাবেই কেমিক্যাল ছিল বলে জানিয়েছে ওই ভবনে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তদন্ত কমিটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর কমিটি আরও জানিয়েছে, ওই ভবনে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না।
আরও পড়ুন- ওয়াহেদ ম্যানশনে কেমিক্যাল ব্যবসার অনুমতি ছিল না
শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় হাজী ওয়াহেদ ম্যানসন পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ বিষয়ক ডিএসসিসি’র তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়।
ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান বলেন, এই ভবনে আগুন নেভানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
এর আগে, বৃহস্পতিবার ওয়াহেদ ম্যানসন পরিদর্শন শেষে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেছিলেন, এই ভবনে কেমিক্যালের কোনো গোডাউন ছিল না। ডিএসসিসি’র তদন্ত দলও একইরকম মনে করছে কি না— জানতে চাইলে লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান বলেন, ‘এই ভবনে অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল। এখানকার যে পাউডার, সেগুলো কেমিক্যাল। এখানে যেসব প্লাস্টিকের বোতল পাওয়া গেছে, সেগুলোও কেমিক্যাল।’
আরও পড়ুন- ‘গ্যাস সিলিন্ডারের নামে পারমানবিক বোমা চাই না’
তিনি আরও বলেন, এগুলো অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল। এগুলো আগুনকে ট্রিগার করেছে। প্রতিটি কেমিক্যালই আগুনকে ট্রিগার করেছে। সে কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো কেমিক্যালের কারণেই হয়েছে। নইলে কখনোই আগুনের এভাবে টিকে থাকার সুযোগ নেই। কেমিক্যাল বা গ্যাসগুলো আগুনকে বার্স্ট করেছে। তখন ওই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এস এম জুলফিকার রহমান বলেন, আমরা দেখেছি, এখানে যে জিনিসগুলো আছে, এগুলো অবশ্যই কেমিক্যাল। যিনি বলেছেন এখানে কোনো কেমিক্যাল ছিল না, সে কথাটি সত্য নয়। আসলে উনি (শিল্পমন্ত্রী) কথাটা কোন আঙ্গিকে বলেছেন, এটা আমার জানা নেই।
আরও পড়ুন- বাণিজ্য এলাকা ও বসতি একসঙ্গে চলতে পারে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কমিটির আরেক সদস্য বাংলাদেশ বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, আমরা পরিদর্শনের সময় দেখেছি, মোট পাঁচটির মতো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওয়াহিদ ম্যানসনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কলাম ও বিনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনটি ব্যবহার করা যাবে কি না, তা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী সাত দিনের মধ্যে বিস্তারিত বলা যাবে। এছাড়া অন্যান্য ভবনগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে শক্তি দরকার, তা আছে বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, আমরা ঘুরে দেখলাম, ওয়াহিদ ম্যানসন অনেক বড় একটি ভবন। কমপক্ষে ১০ কাঠা জমির ওপর ভবনটি নির্মিত। এত বড় একটি ভবনে সিঁড়ি মাত্র একটি, যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়।
আরও পড়ুন- চকবাজার পরিদর্শনে ডিএসসিসি’র তদন্ত দল
বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, ভবনের দ্বিতীয় তলার পুরোটাই গোডাউন। কিন্তু এতে আগুন নেভানোর যে পদ্ধতি, তা পর্যাপ্ত না। অগ্নিনির্বাপণের জন্য পর্যাপ্ত ইক্যুইপমেন্ট নেই। আমি ওপরে উঠে দেখলাম, দ্বিতীয় তলায় পুরোটাই পারফিউম কেমিক্যালে ভরা। ফলে এগুলো আগুনকে বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
রাজউকের অথরাইজড অফিসার মো. নুরুজ্জামান জাহিদ বলেন, এই ভবনটি রাজউক অনুমোদিত কি না, আমরা ওভাবে এখনও তথ্য নিতে পারিনি। কথা বলে জানা যাবে আসলে তারা অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন কি না।
আরও পড়ুন- সকালে চকবাজার পরিদর্শনে যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, কয়েক দিন আগেও সিটি করপোরেশনের মেয়র এলাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন এই কেমিক্যাল গোডাউন বা কারখানাগুলো সরিয়ে নেন। এখানে কিন্তু কোনো কেমিক্যাল গোডাউন বা কারখানার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি এবং কোনো লাইসেন্স রিনিউ করা হয়নি। এগুলোর জন্য আলাদ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন আগুন লেগেছে এবং কারা কারা এ ঘটনার জন্য দায়ী, কমিটি সে বিষয়ে তদন্ত করবেন। অল্প সময়ের মধ্যেই এ তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে এখানকার মানুষদের আরও সচেতন হতে হবে।
এর আগে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডিএসসিসি গঠিত ১০ সদস্যের তদন্ত দল চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ডিএসসিসি’র তদন্ত দলে রয়েছেন— দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী ও অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান, ডিএসসিসি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান ও মো. জাফর আহমেদ, ডিএসসিসি’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম, রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক মো. শাহ আলম ও অথরাইজড অফিসার মো. নুরুজ্জামান জহির।
আরও পড়ুন- আগুনে পোড়া ১৪জনকে দাফন, আজিমপুর খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন। পরে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে ডিএসসিসি’র পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ সরাতে কাজ শুরু করেন।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগে চুড়িহাট্টার হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই বলছেন, ওয়াহেদ ম্যানসনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। কেউ বলছেন, আগুনের সূত্রপাত হোটেল আমানিয়া থেকে। কেউ মনে করছেন, ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কেমিক্যালের গোডাউন থেকেই শুরু আগুনের। তবে কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন লাগার পর তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি ভবনে।
আরও পড়ুন- ‘মাকে বলেছি— পিছু ডেকো না, শুধু দোয়া করো’
ভয়াবহ এ আগুনে পুড়ে এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আহত হয়েছেন আরও ৪১ জন। এ ঘটনা তদন্তে গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিরও আজ সকাল ১০টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/এআই/জেএএম/টিআর
চকবাজারে আগুন ডিএসসিসি তদন্ত কমিটি তদন্ত কমিটির পরিদর্শন হাজী ওয়াহেদ ম্যানসন