বেজমেন্টেও কেমিক্যাল গোডাউন, আগুন লাগলে উড়েই যেত ওয়াহেদ ম্যানসন!
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৩৩
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের সন্ধান পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সেখানে শত শত বস্তা, প্লাস্টিকের ড্রাম আর টিনের মাঝারি সাইজের ড্রাম দেখতে পান তারা। এখানে আগুন লাগলে ভবনটি একেবারে উড়ে যেত বলে মন্তব্য করেন তারা।
শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহের সন্ধান করতে গিয়ে ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে এই দৃশ্য দেখতে পান তারা।
ওইসব বস্তা ও ড্রামে কী আছে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা গোডাউনে মজুদ করা বস্তা ও ড্রামগুলো থেকে নমুনা নিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, আয়রন অক্সাইড, আয়রনিক ইয়ালো, ইঞ্জিনিয়ার কার্বন, অক্সাইড রেডবার ও এসিড গ্রিন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। কোনোভাবে আগুন নিচে গেলে এমনভাবে বিস্ফোরণ ঘটত যা বিল্ডিংটাকে উড়িয়ে নিয়ে যেত। তখন এই আগুন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত। কী ঘটতো ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে বলে জানান ফায়ারের এই কর্মকর্তা।
ফায়ারের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আশেপাশের কয়েকটি ভবন উড়িয়ে দেওয়ার মতো দাহ্য পদার্থ ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে মজুদ রয়েছে। আমরা সেটি সিলগালা করে রেখেছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) একেএম শাকিল নেওয়াজ শুক্রবার দুপুরে সারাবাংলাকে বলেন, ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে বস্তা ও ড্রাম মজুদ দেখা গেছে। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।
আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কোথা থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে তা তদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না। এখানে নানা কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথায় থেকে স্পার্ক হয়েছে এরপর তা কিভাবে দ্রুত ছড়িয়েছে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। কারণ, এখানে দাহ্য পদার্থের শেষ নেই।
বেজমেন্টে যে কেমিক্যাল পাওয়া গেছে তার মালিক কে জানতে চাইলে শাকিল নেওয়াজ বলেন, মালিক কে এখনো জানা যায়নি। অনেকের কাছে শুনে ধারণা করা হচ্ছে, ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলায় পারফিউমের মজুদ যার ছিল, নিচের মজুদও তারই। তবে তার নাম জানা যায়নি এখনো।
বেজমেন্টে আগুন না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শাকিল নেওয়াজ বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার পথটি ছিল পেছনের দিকে এবং সেটি ছিল বন্ধ। তাই অক্সিজেন ভেতরে যেতে পারেনি। অক্সিজেন না গেলে সেখানে আগুনও ছড়ায় না। যার কারণে সবকিছু অক্ষত আছে।
বেজমেন্টে কেমিক্যাল গোডাউন আছে তা এলাকার কেউই জানেন না বলে মত দেন এলাকাবাসী। ওপরে বোতলে গ্যাস ভরানো হয় সেটাই সবাই জানে। পুরান ঢাকায় গোপনে এরকম কত কেমিক্যাল গোডাউন আছে তা হয়ত কেউ জানেনই না বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।
বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান সৈয়দা রাজিয়া সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, আয়রণ অক্সাইড তেমন শক্তিশালী কেমিক্যাল না। বাকি তিনটি আয়রনিক ইয়ালো, ইঞ্জিনিয়ার কার্বন, অক্সাইড রেড বার ও এসিড গ্রিন মোটামুটি শক্তিশালী। তবে সবগুলো যদি একত্রিত হয় এবং আগুনের সংস্পর্শে আসে, তাহলে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মানুষের প্রাণহানির ৯ বছর পর সেই পুরান ঢাকাতেই ঠিক একই কারণে অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন মানুষের প্রানহানি হয়েছে।
আরও পড়ুন: কোনো কেমিকেল গোডাউন ছিল না: শিল্পমন্ত্রী
সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম