মানুষ ভালো থাকলে কেউ কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে: শেখ হাসিনা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৯:৫২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বাংলাদেশের মাটির সন্তান রাষ্ট্র পরিচালনা করুক, এটা অনেকেরই পছন্দ হয় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু ভালো থাকে, তখন আমাদের দেশের কিছু মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’ শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন কোনো মার্শাল ল’ হয়, যখন কোনো অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন ওই গোষ্ঠীটা খুব তৃপ্তির সঙ্গে থাকে। তখন আবার তাদের মূল্য বেড়ে যায়। কারণ জনগণের মূল্য তাদের কাছে কিছু না।’ তিনি বলেন, ‘তারা নিজেরা ক্ষমতায় যেতে পারলে বা ক্ষমতার একটু বাতাস পেলে, সেই বাতাসটুকুর আশায় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে সবসময় ছিনিমিনি খেলার ব্যস্ত থাকে।’
আওয়ামী লীগ একটানা দশ বছর সরকার গঠন করে উন্নয়ন করে বলেই সেই উন্নয়ন দৃশ্যমান বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ একটা সম্মান পেয়েছে। একটা মর্যাদা পেয়েছে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা ক্ষুধা দূর করতে পেরেছি। আমাদের দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। ’
জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উযাপন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করব। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস, মুজিব বর্ষে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসাবেই অধিষ্ঠিত হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। ’ আমরা সেখানেই থেমে থাকবো না, আমরা ২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে, ডেল্টা প্রণয়ন করে সেটার বাস্তবায়নও আমরা শুরু করেছি বলেও জানান তিনি।
ভাষা শহিদদের আত্মদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়, আমরা সেভাবে দেশকে গড়ে তুলবো। একেবারে গ্রামের মানুষটাও একটা নাগরিক সুবিধা পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলবো। যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নযাত্রা যেন সফল হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচন নিয়ে এই ধরনের ব্যবসা করেছে, ট্রেড করেছে, বাণিজ্য করেছে, অকশনে দিয়েছে, তারা জেতার স্বপ্ন দেখে কীভাবে?’ তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত, তাদের নমিনেশন দেওয়ায় জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের এদেশের মানুষ ভোট দেবে না, দেয়নি। ’
১৪ শতক উদযাপনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বাধার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সেই ১৪০০ সাল বরণ করবো। খালেদা জিয়া তখন প্রাইম মিনিস্ট্রার। আমাদের ১৪০০ সাল বরণ করতে দেবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা অনুষ্ঠান করবো, অনুষ্ঠান করতে দেবে না। পুলিশ ঘেরাও করে রাখলো। বাঙালি তো বাধা মানে না, বাধা মানতে জানে না। স্রোতের মতো মানুষ ওখানে ঢুকে গেলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু তো ৭ মার্চের ভাষণে বলে গেছেন, ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ তাই খালেদা জিয়াও, দাবায়ে রাখতে পারেন নাই। আমরা সেই ১৪০০ সাল বরণ করে নিয়েছিলাম। যেটা আমাদের ভাষা-সৃংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত।’
অনুষ্ঠানে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনার পাশাপাশি শোকসন্ত্রপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আখতারুজ্জামান, মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানসহ অনেকে। এছাড়া বিশিষ্ট জনের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
সারাবাংলা/এনআর/এমএনএইচ