Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সবার আগে বিস্ফোরণ ঘটে ওয়াহেদ ম্যানসনের কেমিক্যাল গোডাউনে: পুলিশ


২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২০

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলায় কেমিক্যাল গোডাউন সবার আগে বিস্ফোরিত হয়। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। ওই ভবনের পাশের একটি হোটেলের সিসিটিভি থেকে এ দৃশ্য দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি তদন্ত দল। চকবাজার থানার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এই তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত দলটির একজন সদস্য (এসআই) সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

চকবাজার থানার এই এসআই বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই সবাই যে যার মতো বিস্ফোরণের ঘটনা বলে আসছিলেন। তবে, আমরা অনুসন্ধান শুরু করি ভিন্ন জায়গা থেকে। ফায়ার সার্ভিস বারবার বলছিল, তারা আগুন নেভানো শুরুর পর ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলার দেয়ালে বিস্ফোরণ ঘটেনি। তাহলে কখন ঘটলো? এটা জানতে প্রায় একশ’র মতো লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। ঘুরেফিরে সবার একটাই বক্তব্য। সেটা হলো, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কিন্তু গাড়িতে যখন দেখলাম, সিলিন্ডার অক্ষত আছে, তখন ভিন্ন চিন্তা মাথায় এলো।’

ওই এসআই আরও বলেন, ‘আগুন লাগার পর আমরাও এসে দেখেছি, নিচে দেয়ালের অংশ পড়ে আছে। ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলায় কোনো দেয়াল ছিল না। এর থেকে আমরা আগুনের সূত্রপাত খুঁজতে শুরু করি। পরে শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজমহল হোটেলের পাশে থাকা একটি দোকানে লাগানো সিসি ক্যামেরা থেকে দেখা যায়, রাত ১০টা ৩২ মিনিটে ওপর থেকে আগুনের গোলা আছড়ে পড়ছে সড়কে। সঙ্গে পড়তে দেখা গেছে দেয়ালের অংশ বিশেষও। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাজমহল হোটেলের কর্মীরা তখন রুটি বানাচ্ছিলেন। বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দে তারাও দূরে ছিটকে পড়েন। এসময় আগুনের গোলা পড়তে দেখা যায়। ওই সময়েই লাখ লাখ পারফিউম, লোশন ও অলিভ অয়েলের বোতল ছিটকে পড়তে দেখা যায়। পরদিন সকালেও এসব বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ওপর থেকে একেবারই আগুন ও দেয়াল এসে সড়কে পড়েছে। আর আগুনের সঙ্গে এসেছে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও পারফিউমের বোতল।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক ড. শামসুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন কারণে আগুন লাগতে পারে। এর মধ্যে ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলার কেমিক্যাল গোডাউন বিস্ফোরণের ফলে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। অন্য কারণ দুটি হলো ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ও সিলিন্ডার বিস্ফোরণ।’ তবে, গাড়িতে থাকা সিলিন্ডার অক্ষত পেয়েছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন,‘আগুন লাগার আগে চুড়িহাট্টার ওই সড়কে প্রচণ্ড জ্যাম ছিল আর রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়িতে দাহ্য বিশেষ প্লাস্টিক পদার্থ ছিল। যার ফলে আগুন যেখান থেকেই আসুক না কেন ওইসব দাহ্য পদার্থেও লেগে যায় আগুন। আর আগুনের লেলিহান শিখা এতটাই তীব্র ছিল যে, পানিও কাজ করছিল না। কারণ একটাই, সেটি হলো কেমিক্যাল।’ গত দুই দিনে স্থানীয়দের কেউ বলছিলেন, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আবার কেউ বলেন, রাজমহল হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তারা বুঝতেই পারেননি যে, আগুন কোথা থেকে এসেছে। আগুন লাগার আগের কয়েকদিনের বর্ণনা দিয়ে হাজী রায়হান উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে এলাকায় গ্যাস আর পারফিউমের গন্ধে থাকা যাচ্ছিল না। ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে জিএফসি ফ্যানের মাধ্যমে ভেতরের গ্যাস বের করে দেওয়া হচ্ছিল। কেউ কেউ বলেন, কেমিক্যাল নষ্ট হয়ে গেলে উৎকট গন্ধ আসতো। ওইসব গন্ধযুক্ত কেমিক্যাল বোতলে ভরতো।’ ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে একজন বিহারী পারফিউমের গোডাউন করেছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। তারা বলেন, তিনি সেখান থেকে পুরান ঢাকায় নকল পারফিউম সরবরাহ করতেন। তার আসল নাম কেউ জানাতে না পারলেও স্থানীয়রা তাকে ‘বোম্বাইয়া’ বলে ডাকতেন জানান তারা।

সারাবাংলা/ইউজে/এমএনএইচ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর