Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওয়াহেদ ম্যানসন দেখতে মানুষের ভিড়, ফিরছেন শাস্তির দাবি জানিয়ে


২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫০

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানসন দেখতে কাছে দূরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন উৎসুক জনতা। এতে তদন্তকারী সংস্থার কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও সাধারণ মানুষ কোনো বাধাই মানছেন না। যে যেভাবে পারছেন ঘটনাস্থলে ঢোকার প্রাণপন চেষ্টা করছেন। ফলে, উৎসুক জনতাকে সরাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

রাতের আধারেও উৎসুক জনতার পদচারণায় মুখরিত ছিল বাড়িটির চারপাশ। নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁশির হুইসেল বাঁজিয়ে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দিচ্ছেন। এতে কেউ যাচ্ছে আবার নতুন কেউ আসছে। ফলে সাধারণ মানুষ বেশিক্ষণ সেখানে অবস্থান করতে না পারলেও এক নজর বাড়ির চারপাশ ঘুরেই চলে যাচ্ছেন। আর যাওয়ার সময় একে অপরকে বলছেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সেবা সংস্থাগুলোর উদাসীনতার ফলেই এ ঘটনা। এটা দুর্ঘটনা নয়। এটার শাস্তি হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: ‘কেমিক্যাল অবশ্যই ছিল, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না’

সাধারণ জনতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে, কেউ এসেছেন উত্তরা কিংবা ধানমন্ডি এলাকা থেকে। আবার কেউ কেউ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকেই এসেছেন বাড়িটি দেখতে। আগুন লাগার পর থেকেই বাড়িটির চারপাশে চলাচলে ছিল কড়া নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মী এবং তদন্তকারী সংস্থা ছাড়া কারো প্রবেশাধিকার ছিলনা। কিন্তু সাধারণ মানুষ একটু সুযোগ পেলেই পুলিশি নিরাপত্তা উপেক্ষা করে বাড়িটির চারপাশ ঘুরে দেখার চেষ্টা করছেন। উৎসুক জনতার মাঝে পুরুষের পাশাপাশি ছিল নারীদেরও পদচারণা।

বিজ্ঞাপন

ধানমন্ডি থেকে স্বামীর সঙ্গে বাড়িটি দেখতে এসেছিলেন নাইমা জাহান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, টিভিতে এ মর্মান্তিক ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই খুব খারাপ লাগছে। তাই স্বামীকে বললাম চল একটু জায়গাটা দেখে আসি। আর যাই হউক অন্তত নিজ চোখে যেন দেখে আসতে পারি, কেমন সে জায়গা, যেখানে এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল।

“এসে দেখলাম, কিন্তু অবাক হলাম-পুরো এলাকাটা আবাসিক। জানতে পারলাম বাড়িটির উপর তলা নিচতলা সব জায়গায় নাকি কারখানা, গোডাউন করছে। পার্কিংয়ের জায়গাও নাকি গোডাউন করছে। এটার কারণে যে এতোগুলো মানুষ পুড়ে মরছে। এতোগুলো মানুষ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। তাদের এখন কি হবে। এটা ইচ্ছাকৃত একটা দুর্ঘটনা। এটা তো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়। তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত”-বলেন নাইমা জাহান।

একই কথা বললেন অপর এক নারী শর্মিলা ঠাকুর। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এটা খুবই মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক। এ ধরণের ঘটনা যাতে দ্বিতীয়বার আর পুনারাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য অবশ্যই সরকারকে আরও কঠোর হতো হবে, যাতে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম না থাকে।

রহমতগঞ্জ থেকে দগ্ধ বাড়িটি দেখতে এসেছিলেন অপর একজন সাধারণ জনতা মোঃ বদরুল আলম খোকন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বাড়িটি দেখতে এসেই খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, যারা মারা গেলেন এবং যারা দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছেন তাদের এখন কি হবে। তাদের অনেকেই আছে হয়তো একজনের উপর পুরো পরিবার নির্ভর করতো। কিন্তু এখন তাদের কে দেখবে। কয়েকবছর আগেও নিমতলীর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে কয়েকজনকে ভরণপোষণ হতে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত দিয়েছেন। এ ঘটনায়ও প্রধানমন্ত্রীর এমন একটা দৃষ্টান্ত চাই যাতে স্বজনহারা পরিবারগুলো ভরসা খুঁজে পায় এবং দোষীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় সে দাবি জানাই।

বিজ্ঞাপন

শুধু দগ্ধ বাড়িটি দেখতে নয়, কেউ কেউ চুড়িহাট্টি লেনে ভীড় জমাচ্ছেন ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখার মাঝেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শাহী জামে মসজিদটি দেখতে। সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলেন ভয়াবহ আগুনেও কোনো ক্ষতি হয়নি ওয়াহেদ ম্যানসনের সামনে থাকা পাঁচতলার ওই মসজিদটি। তাই কেউ কেউ আসছেন মসজিদটি এক নজর দেখতে এবং কথার সত্যতা মিলাতে।

টঙ্গী এলাকা থেকে পাঁচজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আসলেন মসজিদটি এক নজর দেখতে। তাদের একজন ওবায়দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ফেসবুকে দেখলাম আগুনে মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাই ঘটনা সত্য না মিথ্যা সেটি দেখতে আমরা এখানে আসলাম। এসে দেখি আসলেই ঘটনা সত্য। ওই বাড়ি (ওয়াহেদ ম্যানসন) থেকে মসজিদ যত কাছে তার চেয়ে দূরে ওই বাড়িটা (ওয়াহেদ ম্যানসনের বিপরীত পাশের অপর একটা বিল্ডিং)। কিন্তু ওই বাড়িটাতেও আগুন লাগছে মসজিদ পার হয়ে। অথচ মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু সামনের অংশের টাইলসগুলো পড়ে গেছে আগুনের তাপে।

ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সুমন সারাবাংলাকে বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর সাধারণ মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে। বিকেলের পর একেবারেই গাগদাগাদির অবস্থা। তাই আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাদেরকে সরিয়ে দিতে। অনেক সময় এখান দিয়ে আটকালে অন্য জায়গা দিয়ে ঢুকে পড়ে।

সারাবাংলা/এসএইচ/জেএএম

ওয়াহেদ ম্যানসন চুড়িহাট্টা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর