দুঃস্বপ্ন তাড়া করে তাদের রাতের ঘুমে
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৪
।। সৈয়দ সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজধানীর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের শিকার সদরঘাটের থানকাপড় ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন। ওই ঘটনার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ নিয়ে সময় পার করছেন তিনি।
কথা হয় দুর্ঘটনার শিকার সালাউদ্দিনের সঙ্গে। সারাবাংলাকে জানায়, ‘তার বাসা চকবাজার ইসলামবাগে। সদরঘাটে থানকাপড়ের ব্যবসা করতেন। পাশেই তার ভায়রা পরশ ব্যপারীর ব্যবসা। প্রতিদিনের মতো বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে দুজন একসঙ্গে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। চুড়িহাট্টা চৌরাস্তায় আসলে হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের আওয়াজ কানে আনে আসে। উপর থেকে কিছু একটা ভারি বস্তু তার মাথার ওপর পড়ে। পাশে থাকা তার ভায়রা পরশ নিজের জান বাঁচাতে তাকে ফেলেই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমিও রিকশা থেকে নেমে দৌঁড়ে পালাতে থাকি। কিছু দূর গিয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। রিকশাচালক বেঁচে আছে কি-না জানি না। ওই রিকশাচালকের ভাড়াটাও পরিশোধ করার সময় পাইনি। তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি।’
‘এখন চোখ বুজলেই ভেসে উঠে সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। ঘুমাতে পারি না। সেদিন শুধু স্ত্রী সন্তানদের কথা মনে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল এটাই বুঝি আমার শেষ দিন’ বলেন সালাউদ্দিন।
সালাউদ্দিনের পাশেই বসে ছিলেন তার স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার। তিনি জানান, তার স্বামী এখনো পর্যন্ত ঘুমাতে পারে নাই। রাতে ঘুমালে একটু পর পর ভয়ে আতকে উঠে। চিকিৎসক ঘুমের ইনজেকশন পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।
অগ্নিকাণ্ডের শিকার আরেক রোগী শেখ মাহমুদ (৪০) সারাবাংলাকে বলেন, ‘তার বাসা চকবাজার হাজী বাল্লু রোডে। তিনি নিজেই স্ট্রোকের রোগী। ঘটনার দিন তার বন্ধু ফয়সাল সরোয়ারের সঙ্গে চুড়ি হাট্টায় যায় ফার্মেসিতে ঔষুধ আনতে। তিনি কোনোরকম দৌড়ে পালিয়ে বাঁচলেও তার বন্ধুর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ফয়সালের স্বজনরাও এখন পর্যন্ত তার হদিস পাইনি। তবে ওই অগ্নিকাণ্ডের ফলে শেখ মাহমুদের শরীরের ১৩ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এছাড়া আরও দগ্ধ হয়ে ভর্তি আছে লালবাগ আতশখানা লেনের মোজাফফর হোসেন (৩২) তার শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে হেলাল শিকদার (১৮) ১৬ শতাংশ, বাবু বাজারের আকবর খান রোডের জাকির হেসেন (৫০) তার ৩৫ শতাংশ, কামরাঙ্গীরচরের ছাতা মসজিদের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৫০) এর ২৮ শতাংশ, মেহেদী হাসান রেজাউল (২২) এর ৫১ শতাংশ, সোহাগ (২২) এর ৬০ শতাংশ ও শরিয়তপুর নড়িয়া উপজেলার সেলিম ব্যাপারী (৪৫) এর ১৪ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে, মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কাশেম হাওলাদারের ছেলে কাওছার হাওলাদার (৪০), তার ডান হাত ও বাম পা ভেঙ্গে গেছে। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার আ. মজিদের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৮) সে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ আইসিইউতে ভর্তি আছে।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক ডা. মুহম্মদ নওয়াজেস খান বলেন, দগ্ধ ৯ জনের মধ্যে ছয় জনের অবস্থা এখনো আশংকাজনক। বাকিদের যেকোন দিন ছেড়ে দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এসএসআর/এআই/এমআই