‘সিমলাকে একবার বাড়িতে এনেছিল পলাশ’
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:২৭
।। আশিকুর রহমান হান্নান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় বইছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা। আর যিনি ছিনতাই করতে চেয়েছিলেন তিনি নাকি কোনো এক চিত্র নায়িকার প্রেমে ব্যর্থ এই ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন এমন গুঞ্জনও ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সেই আলোচিত চিত্রনায়িকার নামও জানা গেছে। তিনি হলেন ম্যাডাম ফুলি সিনেমাখ্যাত নায়িকা সিমলা। সিমলা নিহত বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী মাহমুদ পলাশ বিয়েও করেছিলেন বলে পলাশের বাবা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বেড়াজাল ডিঙিয়ে অস্ত্র নিয়ে রোববার বাংলাদেশ বিমানের দুবাইগামী ফ্লাইটে উঠে পড়েছিলেন ওই যুবক। তিনি পাইলটের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তার ‘পারিবারিক সমস্যা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তা ঘিরে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডোর অভিযানে পলাশ নিহত হয়।
এদিকে তার ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী মাহমুদ পলাশের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মঙ্গলেরগাঁও এলাকায়। সে মঙ্গলেরগাঁয়ের দুধগাটা পিয়ার জাহানের ছেলে।
পিয়ার জাহান বলেন, ‘ছেলে পলাশ মাহমুদ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পরীক্ষা পাস করে। দাখিল পাস করে সে সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়াশোনা করা অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়।
একপর্যায়ে জানা যায়, পলাশ নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে এলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশত না, কথা বলত না।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে সিমলা নামে এক মেয়েকে রাতের বেলা বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুইমাস পর আবার সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। বিয়ের কথা সিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়।’
পি আর জাহান বলেন, ‘আমি সিমলাকে তখন বলেছি- তোমার সঙ্গে বয়সের এত ব্যবধান, কীভাবে আমার ছেলেটাকে বিয়ে করেছো? যাহোক বিয়ে যেহেতু করেই ফেলেছো, আমার ছেলেটা যাতে ভালো হয়ে যায় একটু খেয়াল রেখো।’
তিনি জানান, পলাশের মা রেনু আক্তারের সঙ্গে এরপর তিন মাসের মতো সিমলার কথাবার্তা ও যোগাযোগ হয়। পরে আর যোগাযোগ হয়নি। হয়তো সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।
পলাশের বাবা বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রথমে তারা কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন।
‘আমরা সিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি– আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি অবাধ্য ছিল। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রবাস থেকে আমার পাঠানো টাকা সে নানা পথে খরচ করেছে।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পলাশ ২০১৪ সালে মেঘলা নামে একজনকে বিয়ে করেন। তাদের আয়ান নামে আড়াই বছর বয়সী এক সন্তানও আছে।
পলাশের বাবা জানান, সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে।
রোববার রাতে সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ পলাশের বাসায় এসে একটি ছবি দেখিয়ে তার বাবাকে বলেন, ‘এটি আপনার ছেলে কি না।’
এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে একটি তথ্য আসে যে মেহেদী বা মাহাদী হাসান নামের বা এ ধরনের কেউ দুবাই যাবে এমন কেউ সোনারগাঁওয়ের আছে কি না। পাশাপাশি মৃতদেহের একটি ছবি পাঠানো হয়েছিল।’
ওই ছবি নিয়ে তিনি রাতে পলাশদের বাড়িতে গেলে তার পরিবার পরিচয় নিশ্চিত করে। পরে ছবি দেখে এবং দুবাই যাওয়ার বিষয়টি মিলিয়ে পরিবার নিশ্চিত হয় নিহত ব্যক্তি মাহমুদ পলাশ।
প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ রোববার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিল। পরে কমান্ডো বাহিনীর অভিযানে এ অবস্থার অবসান ঘটে।
এ ঘটনায় সাতটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর রাত ১০টার দিকে বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুন:
উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টা: প্রতিমন্ত্রীর ব্রিফিং দুপুরে
শাহজালালে কয়েক স্তরের তল্লাশি, তবু ধরা পড়েনি বিমান ছিনতাইকারী
শাহ আমানতের বিমান ছিনতাইকারী (ফটো এক্সক্লুসিভ)
কমান্ডো অভিযানে উড়োজাহাজ ‘ছিনতাইকারী’র মৃত্যু
শাহ আমানতে অস্ত্রধারী আটক
সারাবাংলা/একে