‘দুদকের তৎপরতায় খেলাপি ঋণের ১৫শ কোটি টাকা জমা’
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৮
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎপরতার কারণে খেলাপি ঋণের প্রায় ১৫শ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের ‘কৌশলপত্র ২০১৯’ বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের তৎপরতার কারণে খেলাপি ঋণের প্রায় ১৫শ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে যত মামলা হয়েছে তত মামলা অন্য কোনো খাতে হয়নি। আর ব্যাংকের মামলার চার্জশিট না দেওয়ায় ব্যাংকে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে।
তিনি বলেন, সবাই বলে আমরা ব্যাংকিং খাতে কিছু করছি না। তবে ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ ১২০ জনকে আমরা আটক করেছি। আর ব্যাংকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকে আমি তিন বছর কাজ করছি। এই সময়ে সরকার, রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তি বা ক্ষমতাবান কেউ দুদকে এসে দম্ভ দেখায়নি। তবে দুদকের সব কর্মকর্তা সৎ, সেটাও আমি বলছি না। সবাই ধোয়া তুলসি পাতা নয়।’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করেই দুদক কাজ করছে বলে জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার এম এ জমির বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আগে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা এখন ব্যবসা হয়ে গেছে। এতে শিক্ষার অবনতি হচ্ছে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। ল্যাব টেস্টের নামে কমিশন বাণিজ্য চলছে। এছাড়া, ডিজিটাল এই যুগে সাইবার সিকিউরিটি ও হ্যাকিং নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। এই খাতেও কাজ করতে পারে দুদক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দুর্নীতি সমাজের সব স্তরে লেগে আছে। দুদকের কাজের মধ্যে দৃশ্যমান মানদণ্ড প্রয়োজন। আর সেই মানদণ্ডে বিচার হবে স্বচ্ছতা। দুদকের ভাবমূর্তি সঠিক নেই। কিভাবে উন্নত হবে, জানি না। ভাবমূর্তি সবল হলে দুদকের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা উজ্জ্বল হবে।
দুদকে জমা হওয়া অভিযোগের সংখ্যা, অভিযোগের কতগুলো তদন্ত হয়েছে, কতগুলো মামলা হয়েছে বা মামলা সফল হয়েছে কতটি— এসব তথ্যও তুলে ধরতে বলেন সাবেক এই গভর্নর। এসময় তিনি দুদকের গণশুনানি বাড়ানোরও আহ্বান জানান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দুদকের সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো। দায়ের করা মামলা কেন সফল হচ্ছে না, সেটার কারণ বের করা দরকার। হটলাইনে আসা অভিযোগ কত শতাংশ আমলে নেওয়া হয়, সেটার পরিসংখ্যানও দেওয়া উচিত।
শিল্পী হায়দার বলেন, দুর্নীতি বড় না ছোট, সেটা ফাইন্ড আউট করতে হবে। ছোট দুর্নীতিও দুর্নীতি, আবার বড় দুর্নীতিও দুর্নীতি। সুতরাং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের আরও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারে সদিচ্ছার প্রয়োজন। সেবা খাতের দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগছে। আর মেগা দুর্নীতিতে রাষ্ট্রের ভবিষ্যত নষ্ট হয়।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, দুর্নীতি দমনে হতাশা বিশাল। রাষ্ট্র হচ্ছে শক্তিমানের স্বার্থ। দুদকের কাছে মানুষের গগণচুম্বী প্রত্যাশা। দুদককে অবিলম্বে কিছু ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা উচিত। দুয়েক বছরের মধ্যে ২০টি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা উচিত। তাহলে দুদকের প্রতি মানুষের আচ্ছা ফিরে আসবে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, রাষ্ট্র যদি ক্ষমতাবান হয় আর দুর্নীতি না চায়, তাহলে দুর্নীতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজরা যদি ক্ষমতার বলে দৃশ্যমান থাকেন, তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এজন্য দুদকের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল বা দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর