১০ বছরে শীর্ষ পদে সাড়ে সাত হাজার পদোন্নতি: সংসদে প্রতিমন্ত্রী
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:০৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
সংসদ ভবন থেকে: সরকারের টানা দশ বছরে জনপ্রশাসনের শীর্ষ চারটি পদে সাড়ে সাত হাজার জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি জানান, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিব এবং গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৩ পর্যন্ত এ পদোন্নতি দেওয়া হয়।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের করা এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
ফরহাদ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ১৮৪ জনকে সচিব পদে, এক হাজার ১৩০ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে, দুই হাজার ছয় জনকে যুগ্মসচিব, দুই হাজার ৩৭৩ জনকে উপসচিব এবং বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির মাধ্যমে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে এক হাজার ৯৬৬ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের গ্রেড-১ পদে ৯৩ জন, গ্রেড-২ পদে ৩৮৯ জন এবং গ্রেড-৩ পদে এক হাজার ৫৪১ জন পদোন্নতি পেয়েছেন।
সরকারি কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই নীতির অধীনে প্রতি বছর জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা কর্মচারীদের দুই ক্যাটাগরিতে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া জয়। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে জাতীয় পর্যায়ে ১৫ জনকে এবং জেলা পর্যায়ে ২৯ জনকে জন প্রশাসন পদক দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৮-৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে ২৪ হাজার ৩৯১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৩৭-৪০তম বিসিএসে আরও ১০ হাজার ক্যাডারের শূন্য পদ পূরণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। এর বাইরে গত দশ বছরে সরকারি বিভিন্ন দফতর ও সংস্থায় নিয়োগের জন্য ৫৮ হাজার ৩১০টি ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। পিএটিসি’র মাধ্যমে কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০০জনকে বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ করিয়ে আনা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শুদ্ধাচার চর্চা পুরস্কার প্রদান নীতিমালা-২০১৭’ ভালো কাজের জন্য পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি বা তিরস্কারের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা কেন্দ্রীয়ভাবে জানানোর সুযোগ আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেবাগ্রহীতগণ কোন বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হলে সরাসরি লিখিত বা অনলাইনে যে কোনো স্থান হতে অভিযোগ করতে পারেন। প্রাপ্ত অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিবকে অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটে এই কর্মকর্তার নাম, মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর দেওয়া আছে।’
এই কর্মকর্তার কাছে আসা অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। ফলে সরকারি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও সংসদকে জানান প্রতিমন্ত্রী।
ফরহাদ হোসেন বলেন, মাঠ প্রশাসনসহ প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা দায়েরের মাধ্যমে লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ডসহ বিভিন্ন ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্তের শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও সংসদকে জানান প্রতিনমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ২০১৮ সালে বিভিন্ন দফতরের ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮১ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড, ১২ জনকে লঘুদণ্ড এবং ২২ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের কর্মচারীরা একটি দক্ষ, গতিশীল ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এসএমএন