নতুন ২ রাসায়নিক পল্লি হচ্ছে: প্লট বরাদ্দ আইন সংশোধনের প্রস্তাব
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:০২
।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাসায়নিক পল্লি করতে নতুন করে আরও দু’টি জায়গা দেখা হচ্ছে। ঢাকার অদূরে কেরানীঞ্জ ও সাভারে এই জায়গা দেখছে শিল্প মন্ত্রণালয়। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এগুলো চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে।
এদিকে, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা সরাতে শিল্প পার্কে প্লট বরাদ্দ আইন সংশোধন ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধমে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন- ৮ বছরেও হয়নি রাসায়নিক পল্লি: কার দায়, মন্ত্রণালয় না ব্যবসায়ীদের?
শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল হালিম এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন আমরা পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা সরানোর বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছি। এই শিল্পটি নিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছি। তিনি জানান, এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জ ও সাভারে নতুন করে দু’টি জায়গা দেখেছি, যা প্রায় ২০০ একর। সবকিছু পর্যালোচনা করে চলতি সপ্তাহে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি আরও জানান, রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরানোর ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার ব্যাপারেও আমরা সুপারিশ করেছি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চকবাজারের চুড়িহাট্টাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর গত শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার সকল রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরানোর কাজ দ্রুততার সঙ্গে করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি রাসায়নিক পল্লি করতে আগের নির্ধারিত ৫০ একর থেকে বাড়িয়ে তিনশ একর করা এবং করণীয় নির্ধারণ করতে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্রুত বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই কর্মকর্তা জানান, কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নে রাসায়নিক পল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হবে আরও পাঁচ মাস পর। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেও বরাদ্দ না থাকায় আগামী জুলাই মাসের পর কাজ শুরু হবে। এতে ব্যয় ধরা হয় ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। এ প্রকল্পে মোট ৯৬০টি প্লট করা হবে।
এছাড়া কেরানীগঞ্জ ও সাভারে নতুন করে দু’টি জায়গা দেখেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এসব জায়গার ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যালোচনার কাজ চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে জমির ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জমি অধিগ্রহণের পর সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে কারখানা স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কেমিক্যাল কারখানা করার বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এদিকে, রাসায়নিক ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সব তথ্য হালনাগাদ করে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে রাসায়নিক পল্লিতে কারখানা স্থানান্তর করতে ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শিল্প পল্লি নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমদানি করা সব রাসায়নিক দ্রব্য নিরাপদ বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বা জনবসতির বাইরে রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রেতার কাছে সরবরাহের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাসায়নিক পণ্যের গুণাগুণ ঠিক রাখতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিয়ে কেমিক্যালসহ সব ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের আইনের মধ্যে রেখে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়।
শিল্প পার্কে প্লট বরাদ্দ আইন সংশোধন করা প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিসিক শিল্প প্লট বরাদ্দ আইনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য শিল্পপল্লিতে প্লট বরাদ্দের কোনো নিয়ম নেই। তাই কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে জায়গা বরাদ্দ দিতে হলে বর্তমান আইন সংশোধন করতে হবে।
সারাবাংলা/এইচএ/টিআর