Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা নাকি গৃহপালিত বিরোধী দল: মুজিবুল হক চুন্নু


২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৮

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এছাড়া রাষ্ট্রপতির ভাষণকে পূর্ণাঙ্গ ভাষণ মানতেও নারাজ তিনি।

সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য ও দশম সংসদের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এছাড়া নিজেদের দল জাতীয় পার্টি নিয়ে বিভিন্ন জনের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘যখন সরকারেও ছিলাম, বিরোধী দলেও ছিলাম, অনেক অভিযোগ করত আমরা নাকি গৃহপালিত বিরোধী দল। আজ যখন আমাদের নেতা বললেন বিরোধী এবার সরকারে নয়, বিরোধী দলে থাকতে চাই। তাও বলে আমরা নাকি গৃহপালিত বিরোধী দল, আমরা যাব কোথায়? আসলে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তারা আসতে পারেনি বলেই তারা এসব কথা বলছেন।’

মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, এই সরকারের অর্জন আছে, সাফল্য আছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণে শুধু অর্জন এবং সাফল্য সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনো অনেক সমস্যা, যে সমস্যার কারণের মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে। বিষয়টা থাকলে ভাষণা পূর্ণাঙ্গ হত।

এছাড়া ভূমিমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘তিনি বলেছেন জাতীয় পার্টি এখন গণতান্ত্রিক দল, বিরোধী দলে আছে। কিন্তু যখন সরকারে ছিল তখন স্বৈরাচারী দল। আমরা যখন বিরোধী দলে তখন গণতন্ত্রিক, আর যখন সরকারে ছিলাম তখন স্বৈরাচার। যখন যার সঙ্গে সম্পর্ক থাকে ভাল লাগে, যখন সম্পর্ক থাকে না তখন কেউ স্বৈরাচার হয়ে যায়, কেউ স্বৈরাশাসক হয়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা শহরে ১ থেকে দেড় কোটি লোক বাস করে। সরকারি কর্মচারী-সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বেরে হয়েই কোথায় যাবে? তাদের জন্য গণ পরিবহন নেই। মানুষ টিকেট কিনে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাবে কিন্তু পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অভাব।’

এছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই নিয়ে তিনবার একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, অথচ ঢাকা শহরে মানুষের গণ পরিবহণের একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে পারলেন না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মন্ত্রী নতুন কমিটি করেছেন, কমিটি করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আসলে দায় নিয়ে যে কাজটা করার প্রয়োজন সেই কাজ মন্ত্রী করছেন না।’

‘সারাদেশে যানবাহনের সংখ্যা ৩৮ লাখ, আর চালক আছে ২০ লাখ। তাহলে ১৮ লাখ গাড়ি কিভাবে, কে চালান? ফিটনেসবিহীন গাড়ি ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩০। রাস্তায় ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলে দেখার কেউ নেই, বলার কেউ নেই। ৪৭ শতাংশ চালক ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালায়। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ২০১৬ থেকে ২৪ হাজারের ওপরে। আসলে দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করলে যা হয়’ বলেন তিনি।

৭০ ভাগ চালক চোখের সমস্যায় ভুগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে সকল চালকের চোখে সমস্যা তাদের দিয়ে গাড়ি চালানো হলে দুর্ঘটনা হবে না কেন? মন্ত্রী বেবি টেক্সির কাগজ দেখতে যান, গাড়ির কাগজ দেখতে যান। এটা মন্ত্রিকে দেখতে হবে কেন? এগুলো দেখার অনেক মানুষ আছে।’

ব্যাংক খাতের সমালোচনা করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘অর্থনীতির রক্তক্ষরণের নাম ব্যাংক। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ভালো নেই। ব্যাংক খাতকে যদি একটি দেশের অর্থের হৃদপিণ্ড ধরা হয়। তাহলে সেখানে রক্তক্ষরণ ঘটছে অনেক দিন ধরে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ক্যানসারের মতো একবার দেখা দিলে তা ছড়িয়ে পরে গোটা অর্থনীতিতে। ২০০৯ সালে খেলাপী ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৮ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। গত ৬ বছরের ৯ টি নতুন ব্যাংকে খেলাপী ঋণ হয়ে ৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঋণ খেলাপী সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক জনতা ও সোনালী ব্যাংক।

বিজ্ঞাপন

‘অর্থমন্ত্রণলায় বা বাংলোদেশ ব্যাংকও নয়, ব্যাংক খাতের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলির মালিকদের সংগঠন। তাদের ইচ্ছাতে বদলে যাচ্ছে ব্যাংক কোম্পানির নীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর আছে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন। গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে জালিয়াতি হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটির ওপরে’—বলেন তিনি।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরপরও তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছেন । প্রায়ই দেখি পত্রিকায় ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২০ হাজার কম্বল, ৫ কোটি টাকা অনুদান। পরেরদিন দেখি পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রধানমন্ত্রীসহ ছবি। এটা যদি হয় তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন সেই লোকদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া আগে দেখবে প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি ছবি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব, কার ঘাড়ে কয়টা মাথা।’

মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, ‘প্রতিবছর চাকরির বাজারে ১৮-২০ লাখ নতুন চাকরি প্রত্যাশী আসছে। আমরা দেশ-বিদেশে ১০-১৩ লাখ কর্মসংস্থান করতে পারি। তারপরেও প্রতি বছর ৮ লাখ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করতে পারি না।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমআই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর