‘খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে’
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:১৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না দিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১২ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সব শেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানোর জন্য এ সংবাদ সম্মেল আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত ক্ষোভ ও শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, জনগণের ভালবাসায় সিক্ত এবং জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধিী দলের নেতা, দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন—যিনি সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজা দিয়ে একটি পরিত্যাক্ত নির্জন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত সুস্থ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপরও আমরা দেখেছি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যখন তিনি পিজি হাসপাতালে এসেছিলেন, তখন হেঁটেই এসেছিলেন। পরে দেখলাম তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বার বার বলার পর সরকার যখন ব্যবস্থা নেয়নি, তখন আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তার পরও যখন ব্যবস্থা নেয়নি, তখন হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে তাকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
‘সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় হঠাৎ তড়িঘড়ি করে কিছুটা চাপ প্রয়োগ করে— যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নন, সেই চিকিৎসককে দিয়ে সই করিয়ে গত বছর ৮ নভেম্বর আবার তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়’— বলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গত সাড়ে তিন মাস দেশনেত্রীর অসুখ আরও বেড়ে গেছে। বাম কাঁধের ব্যথা বেড়েছে, ডান কাঁধে নতুন করে ব্যথা হচ্ছে, বাম বাহু, বাম পায়ে ও কব্জিতে ব্যথা অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে কারো সাহায্য ছাড়া তিনি দাঁড়াতে বা চলতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা ও কাঁপুনির কারণে তিনি কিছু ধরে রাখতে পারছেন না।’
গত সাড়ে তিন মাসে তার হৃদরোগ, ডায়াবেটিস কিংবা কিডনির কোনো পরীক্ষা করা হয়নি— যা নিয়মিতভাবে করা অত্যন্ত জরুরি ছিল বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে রোগগুলোতে ভুগছেন, সেই রোগগুলো অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। তার বয়স প্রায় ৭৩ বছর। এই বয়সে এই রোগগুলোর যদি নিয়মিত চিকিৎসা না হয়, প্রতিদিন যদি মনিটর করা না হয়, তাহলে তার জীবনের প্রতি মারাত্মক হুমকি এসে যেতে পারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ করেছি বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু সরকার কোনোটাই করেনি। যে মেডিকেল বোর্ড আদালতের নির্দেশে করা হয়েছিল, সেই বোর্ড সাড়ে তিন মাস পরে গত পরশু তাকে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল। মেডিকেল বোর্ড বিস্মিত হয়েছে, গত সাড়ে তিন মাসে কোনো রকম রক্ত পরীক্ষা করা হয়নি, ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়নি, এক্স-রে করা হয়নি, ব্রাড প্রেসার মাপা হয়নি— কোনো চিকিৎসাই দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, যথাসময়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে, পরিত্যাক্ত কারাগারে বন্দি রেখে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটনোর মাধ্যমে একটা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আর এই ষড়ন্ত্রটি হচ্ছে, তাকে অকালে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।’
খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে হেনস্তা করার জন্যই হুইল চেয়ারে করে ক’দিন পর পর আদালতে আনা হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘকাল ধরে পরিকল্পনাগুলো করেছে। তার বিরুদ্ধে একের পর এক যে মামলা দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটারই ভিত্তি নেই।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা দেশবাসীর ধারণার বাইরে ছিল দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি সাধারণ কোনো ব্যক্তি নন। আজকে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা দেখছি, সেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত স্থাপন করার পেছনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আজকে সেই নেতাকে মিথ্যা মামলায় তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’
খালেদা জিয়া কোনো সরকারের কাছ থেকেই এ ধরনের আচরণ ডিজার্ভ করেন না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা তার প্রাপ্য নয়। আমরা মনে করি, অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং মুক্তি দিতে হবে। নইলে তার যদি কোনো ক্ষতি হয়, এর সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সমস্ত খরচ দল থেকে বহন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে তার সুচিকিৎসা প্রদান করা হোক এবং এর জন্য যদি প্রয়োজন হয় বাড়তি কোনো ব্যয়ের, সেই ব্যয় দল বহন করতে প্রস্তুত আছে। আমরা তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এজেড/জেএএম